ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ভাতা পাবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা!

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
ছবি - সংগৃহীত

বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে সরব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তাদের দাবি, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতাংশ অনুযায়ী ভাতা দিতে হবে তাদের। এ দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। তবে এবার শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।

সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের পাঠানো চিঠিতে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

চিঠিতে শিক্ষা উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ ও জীবনমান উন্নয়নের স্বার্থে ভাতা বাড়ানো জরুরি। এতে তাদের পেশাদারত্ব বাড়বে। শিক্ষার মানোন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

অর্থ উপদেষ্টার কাছে পাঠানো চিঠিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৭৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। চিঠিতে উল্লেখ করেন, বর্তমানে প্রায় ৩ লাখ ৯৮ হাজার এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী মাসে এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা পান। প্রস্তাব অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে দুই হাজার এবং চিকিৎসাভাতা এক হাজার টাকায় উন্নীত হবে। পাশাপাশি কর্মচারীদের উৎসবভাতা ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করলে মোট খরচ হবে প্রায় ৭৬৯ কোটি টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, আইনগতসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণেই আটকে আছে শিক্ষকদের দাবিগুলো। এই জটিলতাগুলো দূর করতে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। আবার কেউ বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। 

তবে এবার আর আশ্বাসে নয়, দাবি বাস্তবায়নে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষক নেতা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ঢাকা, জেলা শহর ও উপজেলাভেদে সরকারি চাকরিজীবীরা যেভাবে ভাতা পান, তাদেরও সেই নিয়মে দিতে হবে। তারা তাদের দাবির পক্ষে অনড়। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষকদের দাবিগুলো বিবেচনায় রয়েছে। প্রয়োজনে সংশোধিত বাজেটে সংস্থান রাখা হতে পারে। 
তবে শিক্ষক নেতাদের মতে, সময় নষ্ট না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। কারণ আংশিক সমাধানে শিক্ষকরা ঘরে ফিরে যাবেন না।

বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির দাবি থাকলেও ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট নন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ কারণে গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সরকারি নিয়মে বাড়ি ভাড়া, মেডিকেল ভাতা ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রদান এবং সর্বজনীন বদলি চালুসহ এমপিওভুক্ত (স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও কারিগরি) শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষক সমাবেশ ও সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।

পরে সচিবালয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন শিক্ষকরা। পরে শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন আজিজী জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা।

দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৬ হাজার ৪৪৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার কর্মচারী কাজ করছেন। সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ভাতার সুবিধা পাওয়ার দাবি তাদের দীর্ঘদিনের।