ঢাকা বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

শীতকালে নিউমোনিয়া সুস্থ থাকুক শিশুরা

ডা. জিয়াউল হক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নিউমোনিয়ার আক্রান্তের হার বেড়ে যায় সব বয়সের মানুষের মধ্যে  বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে। নিউমোনিয়া হলো এক ধরনের ফুসফুসের সংক্রমণ, যেখানে ফুসফুসের বাতাস ভর্তি থলি ফুলে যায় এবং সেখানে তরল বা পুঁজ জমে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শীতকালে কেন এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় তা জানা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

শীতকালে নিউমোনিয়া বাড়ার কারণ ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস

শীতের ঠান্ডা বাতাস শ্বাসযন্ত্রের অভ্যন্তরীণ আবরণকে শুষ্ক করে ফেলে। ফলে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সহজেই ফুসফুসে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়।

দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শীতকালে সূর্যালোক কম পাওয়া

যায়, যার ফলে ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব দেখা দেয়। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে তোলে, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ভাইরাল সংক্রমণ বৃদ্ধি

ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু), রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস বা অন্যান্য ঠান্ডাজনিত ভাইরাস শীতকালে বেশি সক্রিয় থাকে। এই ভাইরাল সংক্রমণগুলো অনেক সময় নিউমোনিয়ায় রূপ নিতে পারে, বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

ঘরের ভেতরে বেশি সময় থাকা

শীতকালে মানুষ সাধারণত ঘরের ভেতরেই বেশি সময় কাটায়। ঘরের বায়ু চলাচল সীমিত থাকায় সংক্রমিত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে জীবাণু সহজে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও ধূমপান

যাদের আগে থেকেই হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ফুসফুসজনিত সমস্যা রয়েছে, তারা শীতকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। ধূমপানও ফুসফুসের প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে।

নিউমোনিয়ার সাধারণ উপসর্গ

দীর্ঘস্থায়ী কাশি (কফসহ বা কফ ছাড়া), উচ্চ জ্বর ও প্রচ- কাঁপুনি, বুকের ব্যথা, বিশেষ করে শ্বাস নেওয়ার সময়, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপ ধরা, শরীরে দুর্বলতা ও অবসন্নতা, ঠোঁট ও আঙুলের নখ নীলচে হয়ে যাওয়া (অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে), বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি, অচেতন ভাব বা ক্ষুধামন্দাও দেখা দিতে পারে।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধের উপায়

টিকা গ্রহণ করুন : ইনফ্লুয়েঞ্জা ও

নিউমোনিয়ার টিকা (পিউমোকোকাল ভ্যাকসিন) গ্রহণ করলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন : নিয়মিত হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক ব্যবহার ও অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।

শরীর গরম রাখুন : শীতে হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন। গলা, বুক ও পা ঢেকে রাখুন।

সুষম খাদ্য গ্রহণ ও বিশ্রাম : ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও ‘ডি’-সমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও বিশ্রাম ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।

ধূমপান বন্ধ করুন : ধূমপান ফুসফুসের ক্ষতি করে, ফলে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

শীতকাল মানেই নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া  তবে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। শীতের শুরু থেকেই টিকা গ্রহণ, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং শরীর গরম রাখার মাধ্যমে আপনি নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। সামান্য সতর্কতাই হতে পারে জীবনের বড় রক্ষা।

ডা. জিয়াউল হক
সিনিয়র কনসালটেন্ট, রেসপিরেটরি মেডিসিন, এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা।