ঢাকা বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

খরচের তুলনায় অধিক লাভ, আঁখ চাষে ঝুঁকছে কৃষক

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০২:০৬ এএম

অল্প খরচে বেশি লাভ- এ কারণেই নওগাঁয় দিনদিন বাড়ছে আঁখ চাষ। এ জেলার কৃষকরা একদিকে আখ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপাদন করে অতিরিক্ত আয় করছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আঁখের ফলনও ভালো হয়েছে। উৎপাদিত আঁখ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ২১৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ও উন্নত জাতের আঁখ চাষ হয়েছে। এসব আঁখের বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকারও বেশি।

উঁচু দোআঁশ মাটি ও পানি না জমা জমি আখ চাষের জন্য আদর্শ হওয়ায় কৃষকেরা এ ফসলে আগ্রহী হচ্ছেন। পরিশ্রম কম, উৎপাদন ব্যয় কম এবং বিক্রয় মূল্য বেশি হওয়ায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় আঁখে লাভ তিনগুণ পর্যন্ত হয় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। ভালো ফলন ও বাজারদর কৃষকদের মুখে এনে দিয়েছে আনন্দের হাসি।

নওগাঁ সদর উপজেলার চকবালুভরা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা রবিউল মাহমুদ এ বছর প্রথমবারের মতো ‘ফিলিপাইন ব্ল্যাক’ জাতের আঁখ চাষ করেছেন। তিনি জানান, ‘সখের বসেই চাষ শুরু করেছিলাম। এ জাতের আঁখ এ এলাকায় আগে ছিল না। ক্ষেতলাল থেকে চারা আনতে গিয়ে খরচ বেড়েছে, আবার অভিজ্ঞতাও কম ছিল। তাই লাভ কম হবে। দেড় বিঘা জমিতে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, বিক্রি হবে প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো।’ তিনি আরও বলেন, আঁখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে শাক-সবজি চাষ করে অতিরিক্ত আয় হয়েছে।

রানীনগর উপজেলার চকমনু গ্রামের কৃষক হারেজ বলেন- খরচ কম ও দাম ভালো পাওয়ায় গত ৫ বছর থেকে ৩ বিঘা জমিতে আঁখ চাষ করছি। যেখানে প্রতি বিঘায় খরচ পড়ে অন্তত ৩০ হাজার টাকা। এক বছরের এ ফসল প্রতি বিঘায় বিক্রি হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। খরচ বাদে তার লাভ থাকবে অন্তত আড়াই লাখ টাকা। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগবালাই কম থাকা এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের কারণে উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় আঁখ বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিপিস আঁখ বিক্রি হয় প্রকারভেদে ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় চিবিয়ে এবং রস করেও খাওয়া যায়।

সদর উপজেলার ইকড়তারা গ্রামের ক্রেতা ইয়ামিন বলেন, রানীনগরে এক বিঘা জমির আঁখ দেড় মাস আগে ৭০ হাজার টাকায় কিনে নেয়া হয়। ইতোমধ্যে খরচের টাকা উঠে গেছে। আরও প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রির হবে। যা পুরোটাই লাভ। এসব আঁখ খুচরা বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। আঁখ ব্যবসায়ী আতোয়ার হোসেন বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় আঁখের হাট রানীনগর উপজেলার রেলগেট বাজার। যেখানে ভরমৌসুমে প্রতিসকালে ২-৩ ঘণ্টায় প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো আঁখ বিক্রি হয়। এ ছাড়া ত্রিমোহনী হাট, হালালিয়া হাট, নসরতপুরসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয়।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. খলিলুর রহমান বলেনÑ চিবিয়ে খাওয়া এবং গুড় তৈরি দুই প্রকার আঁখের আবাদ হয়ে থাকে। আঁখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয়। এতে বাড়তি ফসল এবং আঁখের ভালো দাম পেয়ে তারা লাভবান হোন। খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ করা যায়।