ঢাকা বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

মধ্যরাতে ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটরকে বাসা থেকে নিয়ে গেল ডিবি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০৩:০২ এএম

মধ্যরাতে দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর এবং অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান সোহেলকে তুলে নিয়ে গেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই ‘ডিবি প্রধান কথা বলবেন’—এমন অজুহাতে তাকে তুলে নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাংবাদিক সমাজে।

বুধবার (১৮ নভেম্বর) রাত ১২টার পর ৫–৬ জন ব্যক্তি ডিবি পরিচয়ে মিজানুর রহমানের বাসায় প্রবেশ করে তাকে নিয়ে যান। 

সাংবাদিক সোহেলের পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টার পর ৫-৬ জন ব্যক্তি ডিবি পরিচয়ে মিজানুর রহমানের বাসায় প্রবেশ করেন। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন আশরাফুল নামের একজন ডিবি সদস্য।

মিজানুর রহমানের স্ত্রী সুমাইয়া সিমা দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, পুলিশ সদস্যরা কোনো পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। তারা জানান, ডিবি প্রধান (অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম) তার সঙ্গে কথা বলতে চান। কথা শেষ হলেই তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে। দ্রুত বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হলেও রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়নি। আশরাফুল নামের ওই ডিবি সদস্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি বলে জানান সুমাইয়া সিমা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি মধ্যরাতে একজন সাংবাদিককে কেন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে’। তবে সেই ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য’ কী, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

অভিযোগ উঠেছে, মিজানুর রহমানকে তুলে নেওয়ার পেছনে একটি বিশেষ মহলের প্রভাব রয়েছে। মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন পদ্ধতি (NEIR) চালুর বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের নাগরিক ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ব্যবসায়ীদের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। সেখানে মিজানুর রহমান সাংবাদিক হিসেবে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, ফয়েজ আহমদ তৈয়বের ইশারায় এই সংবাদ সম্মেলন বানচাল করার জন্য এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতেই ডিবি পুলিশকে ব্যবহার করে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

এদিকে, বিনা পরোয়ানায় মধ্যরাতে একজন সাংবাদিককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ডিবি প্রধান যদি কথা বলতেই চাইতেন, তবে তাকে দিনের বেলা ডাকা যেত অথবা নোটিশ দেওয়া যেত। তিনি নিজেই হাজির হতেন। রাত ১২টার পর বাসা থেকে তুলে নেওয়া মানে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যা বর্তমান বাংলাদেশে কাম্য নয়।

সাংবাদিক নেতারা অবিলম্বে মিজানুর রহমান সোহেলকে সসম্মানে তার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

একইসঙ্গে, যদি ফয়েজ আহমদ তৈয়বের ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সব গণমাধ্যমকর্মীকে তার সংবাদ বর্জনের আহ্বান জানানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রাখার কথা বলেছেন।