ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

বুধবার শুরু প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন, জেনে নিন কোন দেশে কখন

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ। ছবি- সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে নতুন অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল বুধবার (১৯ নভেম্বর) থেকে চালু হচ্ছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাওয়া এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা সহজে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ অ্যাপের উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘অ্যাপে নিবন্ধিত ভোটাররা ঠিক বা ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। একই সঙ্গে ‘না’ ভোট যুক্ত থাকবে ওই ব্যালটে। যদি কোনো আসনে একজন মাত্র প্রার্থী থাকেন, শুধু সেসব আসনের ভোটাররাই এই ‘না’ ভোট দিতে পারবেন।’

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি ভোটাররা নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।

জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁচ দিন করে নিবন্ধনের সময় বেঁধে দিচ্ছে ইসি। এর মধ্যে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলের ৫২টি দেশের প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা।

এ ছাড়া উত্তর আমেরিকার ১৪টি দেশ ও ওশানিয়া অঞ্চলের দুটি দেশের থাকা বাংলাদেশি ভোটাররা ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন। অপরদিকে ইউরোপের ৪২টি দেশে নিবন্ধন করতে হবে ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে। আর ৪ ডিসেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে নিবন্ধন শুরু হবে, যা চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যালট পেপার যে খামে পাঠানো হবে তার সঙ্গে থাকবে একটি ঘোষণাপত্র। ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি তিনি যে নিজে ভোট দিয়েছেন সেটা উনি ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করবেন এবং স্বাক্ষর করবেন। যদি কোনো ভোটার শুধু ভোট দিয়ে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর ছাড়াই ব্যালট পেপার বাংলাদেশে পাঠান সে ক্ষেত্রে ওই ভোটটি বাতিল হয়ে যাবে।

প্রবাসী ভোটার বাদেও এবার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি চাকরিজীবী ও দেশের ৭১টি কারাগারে বন্দি ও কয়েদিরা। তাদের জন্যও আলাদা নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করবে ইসি।

নিবন্ধন করতে লাগবে যেসব কাগজপত্র

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রণয়নের জন্য নিম্নলিখিত দলিলাদি জমা দিতে হবে-

১. অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র (নিবন্ধন ফরম-২ক)

২. জন্ম নিবন্ধন সনদের অনুলিপি, যা অবশ্যই অনলাইন ভেরিফাইড হতে হবে

৩. বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি (মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও গ্রহণযোগ্য)

৪. বিদেশি পাসপোর্টের কপি অথবা

৫. সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাসরত তিনজন বাংলাদেশি এনআইডিধারীর স্বাক্ষরিত নাগরিকত্ব প্রত্যয়নপত্র (নির্ধারিত ফরমে)

৬. পিতা-মাতার এনআইডির কপি

৭. প্রয়োজনে জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ বা নাগরিক সনদ (বাংলাদেশের ঠিকানা প্রমাণে)

৮. এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি

অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র  (যেখানে প্রযোজ্য)

১. শিক্ষা সনদ (এসএসসি/সমমান, জেএসসি বা পিইসি)

২. ইসি কর্তৃক ঘোষিত বিশেষ এলাকা (চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৬ উপজেলা/থানা)-এর আবেদনকারীদের জন্য বিশেষ তথ্য ফরম

৩. নিকাহনামা ও স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি

৪. নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, মেয়র, সিইও বা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত)

৫. সংশ্লিষ্ট ঠিকানা সংবলিত ইউটিলিটি বিল বা হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ

নিবন্ধন প্রক্রিয়া

প্রবাসী বাংলাদেশিদের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী মিশন অফিসে স্বশরীরে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে তারা প্রয়োজনীয় দলিলাদি জমা দেবেন এবং ছবি, স্বাক্ষর ও বায়োমেট্রিক তথ্য (দশ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ স্ক্যান) প্রদান করবেন।

যদি আবেদনকারী নিজে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে তার পক্ষে বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে দলিলাদি জমা দিতে পারবেন।

যাচাই-বাছাই ও তদন্ত

প্রবাসীদের পূরণকৃত ফরম-২কে-এর তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসার সরেজমিন তদন্ত করবেন। এই তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের জন্য বাধ্যতামূলক হিসেবে গণ্য হবে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন এই অ্যাপ চালুর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত লাখো বাংলাদেশি নাগরিক এখন অনলাইনে সহজেই ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।