ছোট থেকে বড় সবাই কখনো না কখনো এমন এক অভিযানের স্বপ্ন দেখে, যেখানে পাহাড় পেরিয়ে, নদী ডিঙিয়ে, অচেনা এক জগতে চলে যাওয়া যায়। ঠিক এমনই এক মায়াময় স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এনিমেশন মুভি ‘অ্যাবমিনেবল’। এই সিনেমায় আছে জাদু, আছে হাসি, আছে বন্ধুত্ব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সিনেমায় আছে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার সাহস। চলো তবে শোনাই সে গল্প-
গল্পের শুরু হয় চীনের ব্যস্ত শহর শাংহাই থেকে। এই শহরেই এক বাড়িতে থাকে ইয়ি নামের এক কিশোরী মেয়ে। এমনিতে ইয়ি খুব মেধাবী। তবে সে খুব একাকী। কারণ বাবাকে হারানোর পর থেকে তার ভেতরে যেন এক প্রকার শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এক রাতে মন খারাপ হলে ইয়ি বাড়ির ছাদে গিয়ে হঠাৎই দেখতে পায় এক বিশাল লোমশ প্রাণী! মিথ অনুযায়ী প্রাণীটির নাম ইয়েতি। হাজার বছর ধরে এই প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রাণীটিকে দেখে প্রথমে ভয় পেলেও কিছুক্ষণ পর ইয়ি বুঝতে পারে, এই প্রাণীটা মোটেও ভয়ঙ্কর নয়; বরং এই প্রাণী অনেক দয়ালু। ইয়ি বিশাল সে প্রাণীটির নাম দেয় ‘এভারেস্ট’, কারণ সে এসেছে হিমালয়ের চূড়া থেকে। শহরে টহল দেখে ইয়ি বুঝতে পারে, কিছু খারাপ মানুষ এভারেস্টকে বন্দি করতে চাইছে। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় ইয়েতিটিকে তার বাড়ি, অর্থাৎ হিমালয়ের চূড়ায় ফিরিয়ে দিয়ে আসবে। এই যাত্রায় ইয়ির সঙ্গে যোগ দেয় তার বন্ধু জিন এবং ছোট ভাই পেং। তারা তিনজন ও জাদুকরী ইয়েতি মিলে শুরু হয় এক দারুণ অভিযান। তারা শহরের কোলাহল পেরিয়ে সবুজ মাঠ, নদী, তুষারঢাকা পাহাড় অতিক্রম করে এগিয়ে চলে। পথে এভারেস্টের জাদুকরী শক্তি তাদের নানা বিপদ থেকে রক্ষা করে। কখনো ফুলের বনে, কখনো মেঘের ভেতর দিয়ে তাদের অভিযাত্রা হয়ে ওঠে রূপকথার মতো। শেষ পর্যন্ত কী ঘটে তা জানতে হলে তুমিও দেখে নিও সিনেমাটি।
‘অ্যাবমিনেবল’ সিনেমার গল্প শুধু অ্যাডভেঞ্চার গল্পই নয়; এটা বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার গল্পও। ইয়িরা তিনজন এভারেস্টের সঙ্গে এমন এক বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে, যার অনুভূতি হৃদয়ে পৌঁছায়। এই সিনেমায় ইয়ি শেখে হারানোর কষ্ট ভুলে নতুন করে জীবনকে ভালোবাসতে হয়। অন্যদিকে জিন আর পেংও বুঝে যায় সত্যিকারের বন্ধুত্ব মানে শুধু আনন্দ করা নয়; দায়িত্ব নিতে শেখাও বন্ধুত্বের মধ্যে পড়ে।
ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন ও পার্ল স্টুডিওর যৌথ প্রযোজনায় তৈরি এই মুভিটি দর্শকের চোখে রঙিন জাদু ছড়িয়ে দেয়। চীনের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, তুষারঢাকা হিমালয় ছাড়াও এভারেস্টের (ইয়েতি) নরম সাদা লোম, সবকিছু এত সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে যে মনে হবে দর্শক নিজেই যেন সেই অভিযানে আছে। মুভিটির সংগীতও মিষ্টি ও হৃদয়ছোঁয়া, বিশেষ করে ভায়োলিন বাজানোর দৃশ্যগুলোতে অনুভব করা যায়।
‘অ্যাবমিনেবল’ মুভিটি আমাদের শেখায় নিজের স্বপ্নকে কখনো হারিয়ে ফেলতে নেই। ইয়ি যেমন তার বাবার স্মৃতি বুকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, তেমনি প্রতিটি শিশুর ভেতরেও আছে এক অদম্য সাহস। এই মুভিটি দেখলে বোঝা যায়, কোনো স্বপ্নই অসম্ভব নয়; যদি মন থেকে চেষ্টা করা যায়। এটি এমন এক মুভি, যা দেখে হাসিও পায়, আবার চোখে জলও আসে। এভারেস্টের সরল চোখ, ইয়ির বন্ধুত্বের উষ্ণতা দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়। সিনেমার শেষে যখন তারা সবাই মিলে হিমালয়ের চূড়ায় পৌঁছায়, তখন মনে হয়- প্রতিটি মানুষের হৃদয়েও এমন এক চূড়া আছে, যেখানে পৌঁছাতে হলে দরকার বিশ্বাস আর ভালোবাসা।