ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাণিজ্যিক ব্যাংক

তারল্য সংকট কমেছে বেড়েছে আমানত

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১২:১৫ এএম

ব্যাংক খাতে গ্রাহকদের আস্থাহীনতার প্রবণতা কমেছে। ফলে আমানতকারীরা এখন ব্যাংকমুখী হচ্ছেন। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। গত দুবছরে ব্যাংক খাতে গড়ে আমানত বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে ও বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবণতা কমছিল। তখন ব্যাংকগুলো প্রবল তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। এখন আমানত প্রবাহ বাড়ায় তারল্য সংকটের প্রবণতা কমেছে। তবে আওয়ামী লীগ আমলে লুটপাটের কারণে দুর্বল হওয়া ব্যাংকগুলোতে এখনো তারল্য সংকট প্রকট। ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের আস্থা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে জোরালো পদক্ষেপ। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোও আমানতের মুনাফার হার বাড়িয়ে এখন চড়া সুদে গ্রাহকদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ সুদেও আমানত নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত দুবছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ব্যাংক খাতে গড়ে আমানত বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। আলোচ্য সময় কখনো কখনো আমানত কমেছিল। আবার কখনো বেড়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনে বেড়েছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনে বেড়েছিল ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। তিন বছরের পর্যালোচনায় দেখা যায় চলতি বছরেই আমানত বৃদ্ধির হার কম।

এর কারণ হিসাবে ব্যাংকাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত ব্যাপকভাবে কমেছিল। লুটপাটের কারণে অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন আমানতের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতারা ব্যাংক থেকে ব্যাপক হারে গোপনে টাকা তুলে নিতে থাকেন। পাশাপাশি লুটপাটের চিত্র প্রকাশিত হওয়ায় গ্রাহকরা নানা শঙ্কায় পড়েন। এসব কারণে ওই সময়ে আমানত প্রবাহ কমেছে। তবে বর্তমান সরকার আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় এখন আমানত প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুনের শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের স্থিতি ছিল ১৫ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। একই বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানত বেড়েছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আমানতের স্থিতি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকায়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আমানত বেড়েছিল ৮৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আমানতের স্থিতি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। ওই বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমানত বেড়েছিল ৩৪ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানত সবচেয়ে কম বেড়েছিল। চলতি বছরের মে পর্যন্ত আমানতের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকায়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আমানত বেড়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

গত দুবছরের গড় হিসাবে অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। চলতি বছরের জুনেও সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট কমে গেছে। এখন শুধু লুটপাটের কারণে দুর্বল কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। অন্যান্য ব্যাংকগুলোতে সার্বিকভাবে তারল্য সংকট কমে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে মাত্রাতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। তারা ওইসব অর্থ চাহিদা না থাকায় বিনিয়োগ করতে পারছে না। সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কম হওয়ায় ও আমানত বাড়ায় অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণও বেড়েছে। গত বছরের জুনে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৪ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিলে তা বেড়ে ৫ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার ২০ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে সার্বিকভাবে অতিরিক্ত তারল্য আরও বেড়েছে।