তারেক রিয়াজ খান। চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি এনআরবি ব্যাংকে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩০ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা, আমানত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন।
প্রশ্ন : বাজারে মন্দা বা সংকট থাকা সত্ত্বেও আপনারা কীভাবে আমানতকারীদের আস্থা ধরে রেখেছেন?
উত্তর: আমরা আমানতকারীদের টাকা চাহিবামাত্র পরিশোধ ও অন্যান্য ব্যাংকি সেবা দ্রুত প্রদানের মাধ্যমে তাদের আস্থা ধরে রেখেছি। এখন পর্যন্ত এনআরবি ব্যাংকের কোনো গ্রাহক টাকা উত্তোলনে কোনো প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হয় নাই। পাশাপাশি আমাদের ১০০+ ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক ও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ এবার মান নিশ্চিত করছি।
প্রশ্ন : আমানতকারীদের নিরাপত্তা ও অর্থ সুরক্ষায় আপনার ব্যাংক কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
উত্তর: এনআরবি ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শক্তিশালী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, উন্নত সাইবার সিকিউরিটি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলা এবং অভ্যন্তরীণ অডিট ব্যবস্থা কার্যকর করেছে।
প্রশ্ন : ডিজিটাল ব্যাংকিং বা অনলাইন মাধ্যমে আমানত রাখার প্রবণতা কতটা বেড়েছে?
উত্তর: ইউটিলিটি বিল, মোবাইল রিচার্জ, ক্রেডিট কার্ড বিল, ডিপিএসের কিস্তি, ঋণের কিস্তি ইত্যাদির জন্য গ্রাহক সব সময় তার অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালান্স মেনটেইন করে। এ ছাড়া যেকোনো সময়ে টাকার জোগান পেতে গ্রাহক চেষ্টা করে পর্যাপ্ত ব্যালান্স রাখতে, কারণ এনআরবি ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকের এটিএম থেকে কোনো চার্জ ছাড়াই টাকা উত্তোলন করা যায়।
প্রশ্ন : আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক কী ভূমিকা রাখছে? প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমানতসেবা কীভাবে পৌঁছাচ্ছে?
উত্তর: আমাদের ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সহজ অ্যাকাউন্ট চালুর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আমানতসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ও সাব ব্রাঞ্চ নেটয়ার্কের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবার পরিধি বাড়াতে সক্ষম হয়েছি।
প্রশ্ন : আমানত সংগ্রহ বাড়াতে ব্যাংক কী ধরনের নতুন পণ্য বা স্কিম চালু করেছে?
উত্তর: আমরা আকর্ষণীয় রেটে পাওয়ার সেভারস প্লাস অ্যাকাউন্ট, মান্থলি বেনিফিট স্কিম, ডাবল বেনিফিট স্কিম, এনআরবি নিশ্চয়তা ফিক্সড ডিপোজিট (সাথে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ) ক্যাম্পেইন চালু করেছি। এ ছাড়া এনআরবি প্রতিদিন সেভিংস অ্যাকাউন্টে উধরষু বেসিসে লভ্যাংশ দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : নারী, সিনিয়র সিটিজেন বা প্রবাসীদের জন্য আলাদা কোনো স্কিম আছে কি?
উত্তর: নারীদের জন্য ডিপিএস পার্পল স্কিম ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট, প্রবাসীদের জন্য এনআরবি রাইজিং এবং এনআরবি হরিজন টার্ম ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আকর্ষণীয় রেটে এনআরবি সিনিয়র সিটিজেন সেভারস অ্যাকাউন্ট আছে।
প্রশ্ন : অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় আপনার ব্যাংক কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার অফার করে?
উত্তর: আমরা প্রতি মাসের অখঈঙ মিটিংয়ে অন্যান্য ব্যাংকের আমানত এবং ঋণের সুদ হার পর্যালোচনাপূর্বক প্রতিযোগিতামূলক ও আকর্ষণীয় সুদের হার সার্কুলেট করি।
প্রশ্ন : মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল মাধ্যমে আমানত সংগ্রহের উদ্যোগ আছে?
উত্তর: হ্যাঁ, এনআরবি ব্যাংক মোবাইল অ্যাপ এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের ডিজিটালভাবে লেনদেন করার সুবিধা প্রদান করে। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা যেকোনো স্থান থেকে তাদের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারে এবং নতুন আমানত জমা দিতে পারে।
প্রশ্ন : ব্যাংকের নিজস্ব অ্যাপ বা ই-ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মে আমানত ব্যবস্থাপনার কী সুবিধা পাচ্ছে গ্রাহক?
উত্তর: এনআরবি ক্লিক অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৪/৭ ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারে। যা সামগ্রিক ব্যাংক আমানতে প্রভাব ফেলে।
প্রশ্ন : আপনি মনে করেন, আগামী ১ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবণতা কেমন থাকবে?
উত্তর: শক্ত ব্যাংকগুলোর আমানত বাড়বে, দুর্বল ও মিড-রেঞ্জ ব্যাংকগুলোর জন্য আমানত সংগ্রহে চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে।
প্রশ্ন : বর্তমানে আপনার ব্যাংকে মোট আমানতের পরিমাণ কত?
উত্তর: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ অনুযায়ী ৭,৬৮৬ কোটি টাকা।
প্রশ্ন : গত ১-২ বছরে আমানতপ্রবাহ কেমন ছিল? বাড়ছে না কমছে?
উত্তর: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ অনুযায়ী মোট ডিপোজিট ছিল ৭,৩০৫ কোটি টাকা এবং ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ অনুযায়ী ৭,৬৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে আমানত প্রবাহ বেড়েছে ৩৮১ কোটি টাকা।