ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

সালমান শাহর ‘মৃত্যু’

হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ, নতুন করে শুরু হচ্ছে তদন্ত

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১২:৩০ এএম

একসময়ের হার্টথ্রব চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হত্যা মামলা গ্রহণ ও তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তার মায়ের করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে গতকাল সোমবার ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এ রায় দেন।

এ বিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা গ্রহণ করতে বলা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী আবিদ হাসান বলেন, ‘সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করেন।’

এ ছাড়া এ ঘটনায় রিজভী ওরফে ফরহাদ নামে এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন আদালত।  এর আগে ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৬০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।

পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলে, ‘চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।’

ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট নন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা জানতে তিনি আরও তদন্ত চান। সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। 

বিদেশে অবস্থান করায় নীলা চৌধুরীর জবানবন্দি ভার্চুয়ালি রেকর্ডের অনুমতি চাওয়া হয়। এ ছাড়া মামলায় এক আসামির ভিডিও রেকর্ডের কপি চেয়ে আরেকটি আবেদন করা হয়। তবে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সেই আবেদন খারিজ করে দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ। এর মাধ্যমে সালমান শাহ যে আত্মহত্যাই করেছেন, ঘটনার ২৫ বছর পর সেই প্রতিবেদন আদালতে গৃহীত হয়। এরপর সেই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন মামলা করেন বাদী। ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ রিভিশন মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ এবং নি¤œ আদালত থেকে নথি তলবের আদেশ দেন। 

এদিকে পুনঃ তদন্তের নির্দেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে লন্ডন থেকে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেন, ‘যারা দীর্ঘ ২৯ বছর মামলাটি প্রভাবিত করে আত্মহত্যা প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছেন, তাদেরও এখন বিচার চাই।’ সেই তালিকায় কারা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সালমান শাহ হত্যা মামলায় তদন্তের দায়িত্বে ছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে পিবিআইয়ের তৎকালীন প্রধান বনজ কুমার, পিপি আবদুল্লাহ আবু মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন ঠিকঠাকভাবে তৈরি করেননি। অপমৃত্যু মামলা ছিল না। তারা মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নীলা চৌধুরী আরও বলেন, ‘সামিরাসহ আসামিরা যাতে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে, সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করব।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ রহস্যজনকভাবে মারা যান। সে সময় এই বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি। এরপর একাধিক সংস্থা এটি আত্মহত্যা হিসেবে প্রতিবেদন দিলেও সালমান শাহর বাবার মৃত্যুর পর মা তাতে নারাজি দিয়েছেন।