ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

সাগরপথে স্বপ্ন বুনে নিঃস্ব ৭০ যুবক

জামিল মাহমুদ, গৌরনদী (বরিশাল)
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০১:০২ এএম

* আটক যুবকদের ঠাঁই হয়েছে লিবিয়ার একটি গুদামে

লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন বুনে সাগরের মধ্যে আটক ১০৮ বাংলাদেশি যুবকের ঠাঁই হয়েছে লিবিয়ার একটি গুদামে। ওই গুদামে আটকদের মধ্যে ৭০ যুবক বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

এর মধ্যে গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের জামাল মোল্লার ছেলে ইতালি প্রবাসী দালাল জাকির মোল্লা ও বগুড়ার বাসিন্দা ইতালি প্রবাসী দালাল সাজু মিয়ার মাধ্যমে ৬০ জন এবং কুষ্টিয়ার দালাল লিটনের মাধ্যমে ১০ যুবকসহ অপর চার দালালের মাধ্যমে অন্যান্য জেলার ৩৮ জন ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে দিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির পথে গেমিং নৌকায় পা বাড়িয়েছিলেন। তবে স্বপ্নের দেশ ইতালিতে না পৌঁছাতে পারলেও এখন তারা নিঃস্ব হওয়ার পথে। ঠিক কবে তারা দেশে ফিরতে পারবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

গতকাল সোমবার দুপুরে আটক যুবকদের একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, লিবিয়ার বাংকিনা কারাগারের পাশে একটি গুদামে আটক গৌরনদীর বার্থী গ্রামের লাদেন প্যাদা, আকাশসহ তিন যুবক সেখানের কেয়ারটেকারের মাধ্যমে ইমোতে তাদের মা-বাবার কাছে চিরকুট পাঠিয়ে জানিয়েছে, সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির দিকে যাওয়া তিনটি গেমিং নৌকায় গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ৭০ যুবকসহ বিভিন্ন জেলার ১০৮ জন সেখানে আটক রয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি তারা (যুবকদের অভিভাবকরা) দালাল জাকির মোল্লাসহ অন্য দালালদের জানিয়েছেন।

ইতোমধ্যে বিষয়টি জানতে পেরে গৌরনদীর খাঞ্জাপুর গ্রামের মেহেদী হাসানসহ তিন যুবকের স্বজনরা জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে দিয়ে অন্য দালালদের মাধ্যমে গত ১৭ অক্টোবর রাতে লিবিয়ার ওই গুদামের বন্দিদশা থেকে তিনজনকে ছাড়িয়ে আনেন। এ খবর আটক অন্যান্য যুবকের স্বজনদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিভাবকরা গৌরনদীর পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের দালাল জাকির মোল্লার বাড়িতে গিয়ে জাকিরের মা ও বোনকে গৃহবন্দি করে রাখেন। এ সময় কয়েকজন অভিভাবক জাকিরের ঘরের দরজার সামনে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন। পরবর্তীতে চাপে পড়ে গৌরনদীর ২০ যুবককে ১৮ অক্টোবর ওই গোডাউন থেকে মুক্ত করে লিবিয়ার একটি নিরাপদ স্থানে রাখে দালাল জাকির মোল্লা।

সোমবার দুপুরে ইতালি প্রবাসী দালাল জাকির মোল্লার মা নুরজাহান বেগম বলেন, জাকির তার মনোনীত দুজন লিবিয়ানকে দিয়ে ইতোমধ্যে ২০ যুবককে ছাড়িয়েছেন। আগামী তিন দিনের মধ্যে জাকিরের অধীনস্থ আটক অপর যুবকদের বন্দিদশা থেকে ছাড়িয়ে এনে নিরাপদ স্থানে রাখা হবে। তিনি আরও বলেন, জাকির কাউকে জোর করে সাগরপথে যেতে বাধ্য করেনি। বরং যারা গেছেন তারা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেই গেছেন।

আটককৃত যুবকদের বরাত দিয়ে তাদের একাধিক স্বজন জানিয়েছেন, দালাল জাকির মোল্লা তার মনোনীত লিবিয়ার তিনজন ব্যক্তির সহযোগিতায় গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে লিবিয়ার বেনগাজি থেকে একটি গেমিং নৌকাযোগে গৌরনদীর ৩৮ যুবককে সাগরপথে ইতালির উদ্দেশে পাঠানো হয়। একইদিন রাত ১টার দিকে একই স্থান থেকে দালাল জাকির ও সাজুর গৌরনদীর আরও ২২ যুবক এবং অন্য দালালের ১০ জনসহ ৩৮ বাংলাদেশিকে গেমিং নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে পাঠানো হয়। তবে তারা সবাই সাগরপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আটক হয়। এরপর থেকে তাদের খোঁজ না পাওয়ায় পরিবারের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল।

আটককৃতদের বরাত দিয়ে স্বজনরা আরও জানিয়েছেন, ভূমধ্যসাগরে তিনটি গেমিং নৌকায় মোট ১০৮ জন বাংলাদেশি আটক হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ জন গৌরনদীর ও ১০ জন আগৈলঝাড়া উপজেলার বাসিন্দা। বাকি ৩৮ জন ঢাকা, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।