ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

কষ্টের ভেলায় ভেসেও থামেননি শুভাশীনি

শফিকুল ইসলাম খোকন, পাথরঘাটা (বরগুনা)
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০১:০৪ এএম
  • বাঁশের পণ্য আর কৃষিকাজে নিজের ও পরিবারের জীবনযুদ্ধ

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের লাকুরতলা গ্রামের শুভাশীনি রানী আজ এক অনুকরণীয় নাম। স্বামী দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে, তার মধ্যে একজন বাকপ্রতিবন্ধী, আরেকজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। এমন প্রতিকূল বাস্তবতার মধ্যেও শুভাশীনি দমে যাননি। বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি আর কৃষিকাজ করেই তিনি চালাচ্ছেন সংসার।

শুভাশীনির পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী গুণধর বারিক। বহু বছর ধরে অসুস্থ থাকায় কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। ফলে সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে শুভাশীনি রানীর কাঁধে।

তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। কখনো মাঠে ধান ও সবজি চাষে, কখনো ঘরের আঙিনায় বসে বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন মাছ ধরার চাঁই, ঝুড়ি, চালুনি, কুলা, মাথালসহ কৃষিকাজে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী। স্থানীয় পাথরঘাটা বাজারের পূর্বপ্রান্তে নারীদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে তিনি নিজের তৈরি এসব পণ্য বিক্রি করেন।

শুভাশীনি বলেন, ‘তিন মেয়ে, এক ছেলে, তার মধ্যে দুই মেয়ে প্রতিবন্ধী। ছোট মেয়ের সন্তানও প্রতিবন্ধী। এত কষ্টের মধ্যেও সংসারের হাল ধরতে হয়েছে আমাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। হাত-পা ব্যথা হয়ে যায়, তারপরও থামা যায় না। যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে।’

বাঁশের তৈরি পণ্যের বাজার এখন আগের মতো নেই, প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে কমে গেছে চাহিদা। তবুও শুভাশীনি এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তার ভাষায়, ‘প্লাস্টিকের ক্ষতি রোধে বাঁশের তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়াতে চাই। আমাদের পুরোনো ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে পারলে ভালো লাগবে।’ তিনি বর্তমানে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘রূপান্তর’-এর সঙ্গে কাজ করছেন এবং সিসিডিবি’র এনগেজ প্রকল্পের আওতায় বিকল্প জীবিকায়ন ও জলবায়ু সহনশীল কৃষির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

প্রকল্প সমন্বয়কারী অভিজিৎ মজুমদার রতন বলেন, ‘শুভাশীনি রানী আমাদের এনগেজ প্রকল্পের একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। তিনি জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও ভার্মি কম্পোস্ট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এখন তিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শুভাশীনি গ্রামের নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উদাহরণ।’

সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে আজ শুভাশীনি শুধু নিজের পরিবারকেই বাঁচিয়ে রাখেননি বরং গ্রামীণ নারীদের দেখিয়ে দিয়েছেন, চেষ্টা থাকলে জীবনের কষ্টকেও হার মানানো যায়।