জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘অনৈতিক সুবিধার’ বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। দলটির দুই নেতাকে ৬৫ কোটি টাকার কাজ দিয়েছেন এই প্রকৌশলী। শুধু কাজ নয়, লিয়াকত শিকদারসহ আওয়ামী লীগের পলাতক ঠিকাদারদের বিল উঠিয়ে দেওয়ার সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) জালিয়াতি করে পদোন্নতি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ইইডি সূত্র বলছে, সম্প্রতি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রায় ৩২ কোটি টাকার কাজ ইলেকট্রো গ্লোব মিরন এন্টারপ্রাইজকে পাইয়ে দিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ফাঁস করেছেন আসাদুজ্জামান। সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠানের মালিক যুবলীগ নেতা রাকিব হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। একইভাবে রূপগঞ্জের পূর্বাচল মাধ্যমিক সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৫ কোটি টাকার কাজ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের শ্বশুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নুরানি কনস্ট্রাকশনকে পাইয়ে দিতে প্রাক্কলিত ব্যয় কমিয়ে ফাঁস করেছেন। উল্লেখ্য, এ কাজগুলোর দরপত্র কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান। সম্প্রতি একাধিক ঠিকাদার মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে এসব কাজের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।
ইইডি সূত্র আরও জানায়, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই নিজের ভোল পাল্টিয়েছেন। সদ্য বদলি হওয়া প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেনের ক্যাশিয়ার ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বেই পলাতক ঠিকাদার আওয়ামী নেতা লিয়াকত শিকদারকে কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার নেতৃত্বেই দিনাজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলমের মালিকানাধীন মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজকে এখনো দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় একচেটিয়া কাজ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ-হুইপ ইকবালুর রহিমের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে তারা লাইসেন্স ভাড়া বাবদ দুই শতাংশ টাকা আদায় করছেন, যা রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ ছাড়া সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তার পদোন্নতির এসিআরে বিরূপ মন্তব্য থাকলেও সেই এসিআর (আসল কপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়নি। অসদুপায় অবলম্বন করে ইচ্ছেমতো এসিআর টেম্পারিং করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এসিআরে যা লেখা ছিল তাতে তার পদোন্নতি হওয়ার কথাই না। তার এসিআর যাচাই করলেই জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হবে। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান রংপুর, নাটোর, পটুয়াখালীসহ যেখানেই চাকরি করেছেন সেখানেই তিনি দুর্নীতি করে বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান মোবাইল ফোনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। বক্তব্যের জন্য তার অফিসে দেখা করার কথা জানান। আর ইইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদীকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।