ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

জামায়াতের বিক্ষোভে মাওলানা রফিকুল ইসলাম

নব্য ফ্যাসিবাদীদের প্রতিহত করতে জাতি প্রস্তুত

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, নব্য ফ্যাসিবাদীদের প্রতিহত করতে জাতি অতীতের মতোই প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, ‘দেশ কারো বাপের নয়, কোনো পরিবারের নয়; এই দেশ ১৮ কোটি জনগণের। জনগণ যাকেই ভোট দেবে জামায়াতে ইসলামীর আপত্তি নাই। কোনো দল যদি নিজেদের দেশের মালিক মনে করে থাকে, তবে তাদের উচিত হবে ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাকসু থেকে শিক্ষা নেওয়া। সবেমাত্র ছাত্ররা ভোটের মাধ্যমে বয়কট শুরু করছে। জনগণও সুযোগ পেলে নব্য ফ্যাসিবাদীদের ভোটের মাধ্যমে বয়কট করে ইসলামের পক্ষে এক নীরব বিপ্লব ঘটাবে।’

প্রশাসনে দলীয়করণের প্রতিবাদে এবং সর্বস্তরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিতে গতকাল সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্বক বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি প্রশাসন ও উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, ‘দলবাজি করতে চাইলে রাজপথে নেমে আসুন।’ অতীতে দলকানা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রশাসনের সব পর্যায়ের দায়িত্বরতদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন তিনি।

জাতির কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে উল্লেখ করে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির সামনে ওয়াদা করেছেন এই সরকারের কাজ হবে সব গণহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্রের সংস্কার শেষে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া। কিন্তু সরকার তার প্রতিশ্রুতির কোনোটিই এখন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। একটি দলের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে সরকার কেবল নির্বাচনের কথাই বলছে।’

‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য সর্বস্তরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’ এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বিচারের মুখোমুখি করা’ গণমানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রশাসনে দলীয়করণ বন্ধ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সরকার যদি কোনো প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়, তবে জাতি সেই নির্বাচন মেনে নেবে না। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা একটি দলের অনুগত হওয়ার ফলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরছে না। এতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে জনমনে সংশয় তৈরি হচ্ছে। এই সংশয় সরকারের নিরপেক্ষতা প্রমাণের মাধ্যমেই কাটতে পারে। সরকারের নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য অবশ্যই প্রশাসনে দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে, সর্বস্তরের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। নোয়াখালীতে মসজিদে দারসুল কুরআন ক্লাসে একটি দলের পদধারী চিহ্নিত নেতারা হামলা চালানোর ঘটনায় প্রমাণ হয়, সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।’ তিনি ওই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অনতিবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইট থেকে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় কয়েক হাজার দলীয় নেতাকর্মী মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।           

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং ড. আব্দুল মান্নান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কবির আহমদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, আবদুস সালাম, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, ড. মোবারক হোসেন, শাহীন আহমেদ খান, মাওলানা শরীফুল ইসলাম। এ ছাড়া মহানগরী দক্ষিণের সব থানার আমির-সেক্রেটারি ও বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।