ঢাকা সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সরকারি চাকরি ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত স্কুলে শিক্ষক

শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫, ০১:৩০ এএম
  • সকাল ৯টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক হলেও তিনি প্রায়ই বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আসেন। অথচ অ্যাটেনডেন্স খাতায় সকাল ৯টায় স্বাক্ষর দেওয়ারও অভিযোগ আছে

শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্দারিয়া সুতিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন (সুহেল) নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত হন না। বিধি অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক হলেও তিনি প্রায়ই বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আসেন। অথচ অ্যাটেনডেন্স খাতায় সকাল ৯টার স্বাক্ষর দেওয়ারও অভিযোগ আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সুহেল শহরের বটতলায় ‘জিদনি মডেল স্কুল’ নামে একটি ব্যক্তিগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী একজন সরকারি চাকরিজীবী অন্য কোনো পেশায় সম্পৃক্ত থাকার বিধান নেই।

এলাকাবাসীর দাবি, গত ১২ বছর ধরে তিনি নিজের স্কুলে নিয়মিত সময় দিয়ে সরকারি বিদ্যালয়ে দায়িত্বে গাফিলতি করছেন। শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের এমন অবহেলা ও দায়িত্বহীনতায় সুতিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভয়াবহভাবে নেমে গেছে। একসময় ওই বিদ্যালয়ে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে ১০২ জনে নেমেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মুস্তফা কামাল বলেন, শিক্ষকেরা সঠিক সময়ে আসেন না। সোহেল মাস্টার দুই-তিন ঘণ্টা স্কুলে সময় কাটিয়ে চলে যান। এতে শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়া পড়াশোনায় অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও অ্যাডহক কমিটির সদস্য আব্দুল খালেক জানান, আমরা যে স্কুলের জন্য জমি দিয়েছি, সেখানে শিক্ষকদের অনিয়মে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। দুই বছর আগে টিও/এটিওকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাইনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা জানান, গত ৫ আগস্টের আগে অভিযুক্ত শিক্ষক নিজের বদলে একজন প্রাইভেট শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নিতেন এবং তাকে পারিশ্রমিক দিতেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সুহেল স্যার সাধারণত বেলা ১১টার দিকে স্কুলে আসেন। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। তবে ২ ঘণ্টা দেরিতে আসার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক আল আমিন সুহেল বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে স্কুলে উপস্থিত হন। দেরিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি দেরিতে এলেও সঠিকভাবে ক্লাস নিই, শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হয় না।’ তবে ব্যক্তিগত স্কুল পরিচালনার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে শহরের বটতলায় জিদনি মডেল স্কুলে গিয়ে জানা যায়, এখানে প্লে থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী পড়ছে। স্কুলের বাংলা শিক্ষিকা ঝিনুক বলেন, ‘আমাদের এই স্কুলের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন (সুহেল)। তিনি গত ১২ বছর ধরে এই স্কুলটি পরিচালনা করছেন।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে তদন্ত করে অভিযোগ সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।