২০২৬ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় হবে নারী এশিয়ান ফুটবল কাপের ২১তম আসর। এই আসরে প্রথমবারের মতো খেলবে বাংলাদেশ। গত জুলাইয়ে মিয়ানমারে বাছাইপর্বের বৈতরণি পেরিয়ে এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশের মেয়েরা। বাছাইপর্বে অপরাজিত থেকে মূল পর্বে নাম লেখান ঋতুপর্ণা, আফঈদারা। ইতিহাস গড়ে এশিয়া কাপে ওঠার পর থেকেই নারী ফুটবল নিয়ে কাজ করছে বাফুফে। এরই মধ্যে এশিয়া ও এশিয়ার বাইরে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে নারী দলের ম্যাচ আয়োজন করেছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। গত অক্টোবরে ফিফা উইন্ডোতে র্যাঙ্কিংয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা শক্তিশালী থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সর্বশেষ ঘরের মাঠে ইউরোপের দল আজারবাইজান ও মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলেছে তারা। সামনে এশিয়ান কাপের আগমুহূর্তে মালয়েশিয়ায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ। সেখানে কয়েকটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলার কথা রয়েছে। এর আগে ঘরোয়া নারী ফুটবল লিগে ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা।
এশিয়ান কাপ সামনে রেখে এ পর্যন্ত মোট চারটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ নারী দল। এর প্রতিটিতেই হেরেছে তারা। তবে সম্ভাবনাময় ফুটবল খেলেছেন ঋতুপর্ণারা। অবশ্য তাদের টানা ব্যর্থতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ইংলিশ কোচ জেমস পিটার বাটলারের ‘হাইলাইন ডিফেন্স’। এ কৌশলে প্রতিপক্ষের পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল খাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সে ঘটনাই একের পর এক ম্যাচে ঘটছে। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে (৩-০ ও ৫-১) মোট ৮ গোল হজম করে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে মালয়েশিয়ার কাছে ১-০ গোলে হারের জন্য বাটলারের ‘হাইলাইন ডিফেন্সই’ দায়ী। আজারবাইজানের বিপক্ষেও ওই কৌশলে সুবিধা করতে পারেনি দল। বাংলাদেশ দলের বাস্তবতায় এ কৌশল পুরোপুরি প্রয়োগ করা খুবই কঠিন। ‘হাইলাইন ডিফেন্স’ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হলেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় কোচ বাটলার। আজারবাইজান ম্যাচের পর যেভাবে খেলেছে তার দল, সেখানে ঋতুপর্ণাদের দশে দশ মার্কই দিলেন এই কোচ। তবে কোচ যদি এ কৌশল থেকে বেরিয়ে না আসেন, তাহলে এশিয়ান কাপে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ এমন আশঙ্কা করছেন সাবেক নারী ফুটবলার অংম্রা চিং মারমা। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আধুনিক ফুটবল খেলা হচ্ছে। হাইলাইন ডিফেন্স চেষ্টা করা যায়। কিন্তু আমরা এখনো সেই লেভেলে যাইনি। এই কৌশলে খেললে আমরা গোল খাব। কারণ বড় দলগুলোর বিপক্ষে আমরা রানিংয়েও পারব না, নানা দিক থেকে তারা এগিয়ে থাকবে। হাইলাইন ডিফেন্সে সাফের দলগুলোর বিপক্ষে খেলা যায়। কিন্তু বাইরে দলের বিপক্ষে খেলা ঠিক হবে না।’ সম্প্রতি নারী দল যে চারটি ম্যাচে হেরেছে, সেই ম্যাচগুলো দেখেছেন অংম্রা চিং মারমা। তিনি বলেন, ‘কাউন্টার অ্যাটাকেই গোল হজম করেছি আমরা। যখন আপনি টপ লেভেলের টিমের সঙ্গে খেলতে যাবেন, তখন বিপদে পড়বেন। উচিত হবে, যতটুকু সম্ভব ডিফেন্স ধরে রেখে খেলার।’ অংম্রা চিং মারমার মতে, আরও বেশি শক্তিশালী রক্ষণভাগ নিয়ে এশিয়ান কাপে খেলতে যাওয়া উচিত বাংলাদেশের। ইউরোপিয়ান টিমের হিসাবে আজারবাইজানের বিপক্ষে ভালো করেছে মেয়েরা। তবে রক্ষণ দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে দলের। অংম্রা চিং মারমা বলেন, ‘রুপনা, মারিয়া ও মনিকারা দারুণ খেলেছে। তবে ডিফেন্স লাইন আরও ভালো করা দরকার। ওদের হাইট দেখেন, আঁখি, মাসুরা ছিল ওই লেভেলের হাইটে। তাদের নিয়ে ডিফেন্সে লাইনটা ভালো করা যায়।’
র্যাঙ্কিংয়ে আট ধাপ অবনতি নারী দলের: ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে একবারে ২৪ ধাপ এগিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন আফঈদা খন্দকাররা। ৭ আগস্ট ২৪ ধাপ এগিয়ে ১০৪ নম্বরে ছিলেন তারা। পয়েন্ট ছিল ১১৮০। কিন্তু চার মাস পেরোতেই উলটো রথে লাল-সবুজের মেয়েরা। চার ম্যাচে হেরে আট ধাপ নেমে গেল জাতীয় নারী ফুটবল দল। বৃহস্পতিবার ঘোষিত নতুন র্যাঙ্কিং অনুযায়ী আফঈদা, ঋতুপর্ণাদের র্যাঙ্কিং ১১২ আর পয়েন্ট ১১৬৮। অবশ্য এই অবনমন অনুমিতই ছিল। অক্টোবর ও নভেম্বরে দুটি ফিফা উইন্ডো মিলিয়ে চার ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। চারটিতেই পেয়েছে হারের তেতো স্বাদ। অক্টোবরে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমটিতে ৩-০, দ্বিতীয়টিতে হারতে হয়েছে ৫-১ ব্যবধানে। নভেম্বরে ঘরের মাঠে মালয়েশিয়া ও আজারবাইজানকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে ১-০ ব্যবধানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ইউরোপীয় দল আজারবাইজানের বিপক্ষে ভালো ফুটবল খেললেও এড়াতে পারেনি ২-১ গোলের হার। টানা চার ম্যাচ হেরে খোয়াতে হয়েছে ১২ রেটিং পয়েন্ট। মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে খেলবে বাংলাদেশ। বি গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ চীন, উত্তর কোরিয়া ও উজবেকিস্তান। তিন দলের মধ্যে উত্তর কোরিয়া এক ধাপ এগিয়ে ৯ নম্বরে আছে। তিন ধাপ এগিয়ে উজবেকিস্তানের অবস্থান ৪৯। এক ধাপ পিছিয়ে ১৭ নম্বরে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দল চীন।

