রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে মা ও মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শাহজাহান রোডের ওই বাসা থেকে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চার দিন আগে কাজে নেওয়া গৃহকর্মী আয়েশাকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ ও প্রতিবেশী সূত্র জানায়, আনুমানিক ২০ বছর বয়সী আয়েশা সেদিন সকালে স্বাভাবিকভাবেই বাসায় কাজে যান। তবে প্রায় দুই ঘণ্টা পর তিনি বেরিয়ে যান ভিন্ন রূপে। বোরখা পরে ঢুকলেও বের হন স্কুলড্রেস পরে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে। এই দুই ঘণ্টার মধ্যেই ঘটে যায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড।
ঘটনাস্থল দেখে তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত ও প্রশিক্ষিত কারও হাতের কাজ। মা ও মেয়ের শরীরে যে পরিমাণ ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে, তা নিতান্তই আবেগপ্রসূত বা হঠকারী হত্যাকাণ্ড নয় বরং অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়, লক্ষ্য নির্ধারণ করে আঘাত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এত নৃশংস সুরতহাল তারা দেখেননি। হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, ঘাতক স্বাভাবিক কেউ নন। একজন অদক্ষ ব্যক্তি এভাবে ধারাবাহিকভাবে আঘাত করতে পারে না।
সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, লায়লা আফরোজের শরীরজুড়ে রয়েছে প্রায় ৩০টি জখমের চিহ্ন। বাম গাল, থুতনি, গলার নিচ থেকে শুরু করে দুই হাত, বুক ও পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মেয়ের শরীরেও রয়েছে অন্তত চারটি গভীর ক্ষত। ধারালো ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের আঘাত সাধারণত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেউই দিতে পারে। তারা মনে করছেন, হত্যার পর ঘাতক বাথরুমে গিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করে ফেলে এবং এরপর স্কুলড্রেস পরে বেরিয়ে যান। এতে হত্যাকাণ্ড গোপন করার একটি পরিকল্পিত প্রয়াস স্পষ্ট।
ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাতে পরিবারের কাছে মা–মেয়ের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেছে পরিবার।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান গণমাধ্যমকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। হত্যার আগে-পরে আয়েশার উপস্থিতি ও আচরণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হত্যার নৃশংসতা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ঘাতক প্রশিক্ষিত। প্রশিক্ষণ না থাকলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়।

