ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

লাখেরও বেশি শিক্ষক পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ছেলেখেলা করছে এনটিআরসিএ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) প্রতীক। ছবি- সংগৃহীত

এক লাখেরও বেশি বেকার-শিক্ষক পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ছেলেখেলা শুরু করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তাই সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে প্রতিদিন রাজধানীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে চাকরিপ্রার্থী তরুণ-তরুণীরা।

গত রোববার শিক্ষক পদপ্রত্যাশীরা ‘লং মার্চ টু সচিবালয়’ শুরু করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। গেলো বুধবার দিনভর বৃষ্টিতে ভিজে ইস্কাটনে এনটিআরসিএ দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছেন তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এনটিআরসিএর ফটক বন্ধ করেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন কর্মকর্তারা।

বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করে থাকে এনটিআরসিএ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে থাকে।

৪ জুন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এরপরই শুরু হয়েছে অসন্তোষ। কারণ, মৌখিক পরীক্ষাতেই বাদ দেওয়া হয়েছে ২৩ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীকে। অথচ এনটিআরসিএ সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে শুধু লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ওপর ভিত্তি করে।

১৮তম নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, মৌখিক পরীক্ষায় পাস করতে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। প্রার্থীদের অভিযোগ ৪০ শতাংশের বেশি নম্বর পেলেও ফেল করানো হয়েছে। কারণ ২০ নম্বরের মধ্যে ১২ নম্বর দেওয়া হয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের ওপর। আর প্রশ্নোত্তরের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় ৮ নম্বর।

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, বিধি লঙ্ঘন করে তাদের ফেল করানো হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষায় অনভিজ্ঞ, বিষয় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ না থাকা ছাড়াও মৌখিক পরীক্ষায় অবান্তর নানা প্রশ্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

গত ১৬ জুন ১ লাখ ৮২২ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। এ বিজ্ঞপ্তির পর শুরু হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের বড় অসন্তোষ। তারা বলছেন, এ বিজ্ঞপ্তিতে এনটিআরসিএ অবান্তর আর উদ্ভট শর্ত জুড়ে দিয়েছে।

এর ফলে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তারা চাকরির আবেদন করতে পারছেন না। কারণ বিজ্ঞপ্তির শর্তে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বয়স গত ৪ জুন (১৮তম নিবন্ধনের ফল প্রকাশের দিনে) সর্বোচ্চ ৩৫ বছর হতে হবে। অথচ এ নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে।

প্রার্থীরা বলছেন, বয়স নির্ধারণ হতে হবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন, ফল প্রকাশের দিন নয়। এনটিআরসিএর এ সিদ্ধান্ত উদ্ভট আখ্যা দিয়ে এটি বেকারদের স্বার্থ পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেন চাকরিপ্রার্থীরা।

তাছাড়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশে দেড় বছরের বেশি পার হয়ে গেছে। ফল প্রকাশে এ বিলম্বের দায় চাকরিপ্রার্থীরা কেন নেবে? তারা বলছেন, এনটিআরসি কর্মকর্তারা চাকরির অপেক্ষায় থাকা বেকার তরুণ-তরুণীদের কথা না ভেবে ফল প্রকাশের দিনকে বয়সসীমা হিসেবে ধরেছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করেন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী। পরে সচিব এএমএম রিজওয়ানুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ভবিষ্যতে নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনকেই বয়স নির্ধারণ করে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে এনটিআরসিএর। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আর যারা মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করানোর অভিযোগ করছেন তাদের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।