হাজতখানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতকড়া খুলে পালিয়েছেন অপহরণের পর হত্যা মামলার আসামি শরিফুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তিনি পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পড়ানো ছিল। সে ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া লুজ করে কৌশলে খুলে ফেলে।
পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে ।
আদালতের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য চার আসামিকে নিয়ে আদালতের হাজত খানার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পালিয়ে যাওয়া আসামি শরিফুল ইসলাম সবার সামনে ছিলেন।
তাদের পেছন থেকে দড়ি ধরে হাঁটছিলেন ওই কনস্টেবল। এভাবে আদালত ভবনের নিচে সিঁড়ির কাছে পৌঁছালে ওই আসামি কৌশলে হাতকড়া খুলে দৌড় দেন। পরে তিনি পাশের একটা আদালতে যান। সেখানে গিয়ে পরিহিত সাদা শার্ট খুলে হাতে নেন।
পরে লাল টি-শার্ট পড়া অবস্থায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্কুলছাত্র জিসান হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা মামলাটি ঢাকার ৩য় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালতে বিচারাধীন। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। দুই আসামি শরীফুল ইসলাম এবং শাহিন মন্ডলকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাদের এজলাসে তোলা হয়।
সাক্ষী দিতে আদালতে হাজির হন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপু। তিনি এদিন সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য শেষে আসামিদের আদালত (দ্বিতীয় তলা) থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে নিচ তলা থেকে পালিয়ে যান শরিফুল ইসলাম।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি দুপুরে খিলগাঁও থানাধীন সিপাহীবাগস্থ আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াতে যান জিসান হোসেন। এরপর আর বাসায় ফিরে আসেনি। পরিবার খোঁজাখুঁজি করেও তাকে খুঁজে পাইনি। পরদিন ভোর রাত চারটার দিকে জিসানের মোবাইল থেকে তার বাবা মোফাজ্জল হোসেনের মোবাইলে ম্যাসেজ আসে তার ছেলেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ৩০ মিনিট পর ফোন করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে জিসানকে মুক্ত করতে। এ ঘটনায় মোফাজ্জল হোসেন খিলগাঁও থানায় সাধারণ করেন।
পরে ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে খবর পান, জিসানের বয়সী এক ছেলের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যালে পড়ে আছে। সেখানে গিয়ে তিনি ছেলের মরদেহ শনাক্ত করেন।
তিনি জানতে পারেন, বাড্ডা থানা পুলিশ আফতাব নগরস্থ আলমগীরের মাছের খামারের মধ্যে জিসানের দেহে চারটি ইট, মাফলার দিয়ে কোমরের সঙ্গে বাধা অবস্থায় পায়। পরে র্যাব জিসান হত্যার সঙ্গে জড়িত শাহিন মিয়া ও শরিফুল ইসলামকে আটক করে।
র্যাবের কাছে তারা স্বীকার করে, ১৯ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মুক্তিপণের উদ্দেশ্য জিসানকে ভুল বুঝিয়ে ফুসলিয়ে খিলগাঁও থানাধীন মেরাদিয়া সিপাহীবাগ নতুন রাস্তা রিকশা গ্যারেজ থেকে অপহরণ করে বাড্ডা থানাধীন আফতাব নগরস্থ আলমগীরের মাছের খামার নিয়ে জিসানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
মরদেহ গুম করতে জিসানের কোমরের সঙ্গে মাফলার দিয়ে চারটি ইট বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ২৪ জানুয়ারি মোফাজ্জল হোসেন খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি খিলগাঁও থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ রাহাৎ খান দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে।