নড়াইলের কালিয়া উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানা হত্যা মামলায় একই উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কাজল মোল্লাসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. রফিকুল ইসলাম এ রায় দেন। রায়ে আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২১ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেনÑ সেতু মোল্লা, লিংকু শেখ, সিরাজুল ইসলাম ওরফে শিপুল মোল্লা, লিঠু মোল্লা ও তপু খান ওরফে হাশিব খান। যাবজ্জীবন কারাদ-ের পাশাপাশি প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদ- ভোগ করতে হবে।
বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-প্রাপ্ত ১১ আসামি হলেনÑ তৈয়েবুর গাজী, হুমায়ুন মোল্লা, লিমন মোল্লা, হৃদয় খান, টনি মোল্লা, সোহাগ মোল্লা, হাসমত মোল্লা, নজরুল মোল্লা, রবি মোল্লা, আবুজর মোল্লা ও সম্রাট মোল্লা। এদের মধ্যে প্রথম ৭ জনকে ১০ বছরের কারাদ-সহ ৫ হাজার টাকা অর্থদ-, অনাদায়ে আরও ১ মাসের সশ্রম কারাদ- এবং অন্য চার আসামিকে এক বছরের কারাদ-সহ ২০০ টাকা অর্থদ-, অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদ- ভোগ করতে হবে। এ ছাড়া এই মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২১ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডালিয়া পারভীন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২০ সালের ৫ আগস্ট নড়াইল জেলার কালিয়া থানাধীন ডেওয়াডাঙ্গার সরদার তবিবর রহমানের বাড়িতে পূর্বশত্রুতার জেরে আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দোনলা বন্দুক, শটগান, পিস্তল, রামদা, চাপাতিসহ মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা করে ভুক্তভোগী মাসুদ রানাকে গুলি, কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে উদ্ধার করে রানাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় মাসুদ রানার ছোট ভাই মামুন শেখ কালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরের বছর ১ সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলাটির বিচার চলাকালে অভিযোগপত্রভুক্ত ৪৭ জনের মধ্যে ৪০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। এই মামলায় বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য মামলাটি স্থানান্তরের নির্দেশ দেন।
এদিকে রায় ঘোষণার পর আসামিদের মৃত্যুদ- না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন নিহতের স্বজন ও আসামিদের হামলায় আহত ভুক্তভোগীরা। তারা বিচারককে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে আদালতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডালিয়া পারভিন বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। এ মামলার প্রধান আসামি কাজল মোল্লা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সব কিছু প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ফাঁসির আদেশ না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন