‘দেশের তালিকাভুক্ত প্রথম বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবি ব্যাংক পিএলসি। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অনেক প্রথমের সর্বপ্রথম হয়েছে ব্যাংকটি। রাজনৈতিক পালাবদলে সাময়িক সংকটে পড়লেও গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনে সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল এবি ব্যাংক। গত ৫ মে থেকে এবি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন সৈয়দ মিজানুর রহমান। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ব্যাংকটির হাল ধরেন তিনি।
সম্প্রতি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ ও সংকট উত্তোরণে সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সৈয়দ মিজানুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিজনেস এডিটর রহিম শেখ।
এবি ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাবেন?
পুরো ব্যাংক খাত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। আশার কথা হলো, সাত মাস আগে যে অবস্থা ছিল, এখন আর সেই অবস্থায় নেই। সবাই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অন্যান্য ব্যাংকের মতো এবি ব্যাংকও চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে অন্য ব্যাংকের মতো এবি ব্যাংকে টাকা তুলতে এসে কেউ কখনো ফেরত যাননি। ব্যাংকে জমানো টাকা দাবি অনুযায়ী চাহিবামাত্র পরিশোধ করা একটি ব্যাংকের কাছে গ্রাহকের মূল চাওয়া। এবি ব্যাংক সেটি যথাযথভাবে পালন করেছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি ও অন্যান্য পদক্ষেপ চলছে, এ বছরের মধ্যে এর ফলাফল দেখা যাবে।
বর্তমানে সারা দেশে ১০৪টি পূর্ণাঙ্গ শাখা, সাব-ব্রাঞ্চ, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ২৭০টিরও বেশি এটিএম নিয়ে এবি ব্যাংক সারা দেশে নির্ভরযোগ্য ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, ভারতের মুম্বাইয়ে একটি শাখা, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে একটি প্রতিনিধি অফিস এবং হংকংয়ে নিজস্ব মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি এবি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেড পরিচালনা করছে।
এ ছাড়া, ব্যাংকটির পাঁচটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং কাস্টোডিয়াল সার্ভিসও অন্তর্ভুক্ত, যা আর্থিক খাতে ব্যাংকের সামর্থ্যকে করেছে আরও বিস্তৃত। এখন আমানত বাড়াতে নতুন আমানত পণ্য চালু করা হয়েছে। চলতি বছরের সাত মাসে এবি ব্যাংকের নতুন আমানত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলা হয়েছে ২৬ হাজারেরও বেশি। গত সাত মাসে রেমিটেন্স এসেছে ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এসব অর্জনের মাধ্যমে এবি ব্যাংক তার সুনাম ধরে রাখতে পারবে বলে আমি আশা করছি।
ব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাবেন?
মূলত ব্যাংক একটি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যার মূল লক্ষ্যই হলো মুনাফা বাড়ানো । তবে এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। আপনারা জানেন, এবি ব্যাংক একসময় ব্র্যান্ড ব্যাংক ছিল, সেটা এবি ব্যাংক ধরে রাখার চেষ্টা করছে। সারা দেশে ব্যাংকের উপস্থিতি আছে। আমরা সারা দেশে নতুন উদ্যোমে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা চাই গ্রাহকদের গুণগত সেবা দিতে। এই লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে নতুন কিছু সেবাপণ্য গ্রাহকদের জন্য নিয়ে এসেছি। এখন আপাতত করপোরেট কোনো ঋণ আমরা দিচ্ছি না। ঋণ বিতরণে এখন আমরা কৃষি, এসএমই এবং অন্যান্য নিশ্চিত নিরাপদ খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
এবি ব্যাংকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন কোনটি বলে আপনি মনে করেন?
এবি ব্যাংক অনেক ‘প্রথমের’ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেÑ প্রথম এটিএম স্থাপন, প্রথম বিদেশি শাখা, প্রথম সিন্ডিকেশন ফাইন্যান্সিং ইত্যাদি। তবে আমি বলব, আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করা এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেকসই ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা। আমরা শুধু মুনাফা নয়, দেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছি।
বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য ও সেবার বিষয়ে কিছু বলুন
ব্যাপক বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য ও সেবার মাধ্যমে এবি ব্যাংক দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর মাঝে তার অবস্থান নিশ্চিত করেছে। কার্যত প্রত্যেক গ্রাহকশ্রেণিকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে এবি ব্যাংক ব্যাপক পরিসরের আমানতি ও ঋণসুবিধা প্রদান করছে। স্টুডেন্ট ব্যাংকিং থেকে প্রায়োরিটি ব্যাংকিংÑ সবই রয়েছে এবির ব্যাংকিং পণ্যের ভান্ডারে। ব্যাংকের পণ্যের সম্ভার খুবই সমৃদ্ধ।
উদ্ভাবনী পণ্য এবং সেবা চালু করা হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) ঋণ, নারী উদ্যোক্তা ঋণ, ভোক্তা ঋণ, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড (স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক), এটিএম, ইন্টারনেট ও এসএমএস ব্যাংকিং, রেমিট্যান্স সেবা, ট্রেজারি পণ্য ও সেবা, করপোরেট স্ট্রাকচার্ড ফাইন্যান্স, ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণকরণ, বিনিয়োগ ব্যাংকিং, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষ পণ্য ও সেবা, প্রায়োরিটি ব্যাংকিং এবং গ্রাহক সেবাসহ সব ক্ষেত্রে। এবি ব্যাংকের রয়েছে উন্নতমানের পণ্য ও সেবা এবং নিষ্ঠাবান রিলেশনশিপ ম্যানেজারগণ, যারা গ্রাহকের আর্থিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখা এবং অগ্রাধিকার প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে কী কী চ্যালেঞ্জ আপনি দেখছেন?
বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে কয়েকটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে বিনিয়োগে স্থবিরতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা, নন-পারফর্মিং লোন এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি ও মান রক্ষা।
এ ছাড়া ফিনটেক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রতিযোগিতা, কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিও বড় চ্যালেঞ্জ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন