ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

পালাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা, ইসরায়েলে হরতাল - গাজা দখল পরিকল্পনা

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৮:৫২ এএম

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের জেইতুন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা সাত দিনের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের মুখে হাজার হাজার মানুষ গাজা সিটি ছেড়ে পালাচ্ছে। স্থানীয় হামাস নিয়ন্ত্রিত পৌরসভা জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন ‘বিপর্যয়কর’। গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের এমন হামলায় গতকাল সোমবার অন্তত ১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার বৃহত্তম শহর দখলের পরিকল্পনার আগে ইসরায়েল সেখানে আক্রমণ তীব্রতর করছে। সোমবার ভোর থেকে উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে আটজন সাহায্যের জন্য বেরিয়ে এসেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা দক্ষিণ গাজায় মানুষ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে আবারও তাঁবু আনার অনুমতি দেবে।

ইসরায়েলের লক্ষ্য এক মিলিয়নের বেশি মানুষকে গাজা সিটি থেকে জোর করে দক্ষিণ অংশের ক্যাম্পে পাঠানো। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইতিমধ্যে এ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। গাজার পৌরসভা জানিয়েছে, জেইতুনের প্রায় ৫০ হাজার অধিবাসীর অধিকাংশই খাদ্য ও পানির অভাবে ভুগছে। স্থানীয় বাসিন্দা ঘাসসান কাশকো সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিমান হামলা আর ট্যাংকের গোলার শব্দে বিস্ফোরণ থামেই না। আমরা ঘুমের স্বাদ ভুলে গেছি।’ হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে। গাজা সিটির বাসিন্দাদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে ইসরায়েলের পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস।

তাদের দাবি, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ওই এলাকায় নতুন করে জাতি হত্যা (জেনোসাইড) শুরু হবে এবং অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। গত রোববার এ কথা বলেছে হামাস। ইসরায়েলি সেনারা বলেছেন, তারা রোববার থেকে তাবু ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে দক্ষিণাঞ্চলে সরানোর পরিকল্পনা মাথায় রেখে এমনটা করছেন তারা।

ইসরায়েলের দাবি, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন পরিকল্পনা করেছে তারা। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মানবিকতার ছদ্মবেশে তাঁবু স্থাপন করাটা স্পষ্টত প্রতারণা। দখলদার বাহিনী যে নৃশংস অপরাধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা ঢাকতে এমনটা করা হচ্ছে।’ ইসরায়েল চলতি মাসের শুরুতে বলেছে, তারা উত্তর গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে নতুন অভিযান চালাবে।

ওই শহর গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র এবং সেখানে প্রায় ২২ লাখ মানুষের বসবাস। ইসরায়েল চলতি মাসের শুরুতে বলেছে, তারা উত্তর গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে নতুন অভিযান চালাবে। ওই শহর গাজার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র এবং সেখানে প্রায় ২২ লাখ মানুষের বসবাস। ইসরায়েলের এই পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, এ হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। বন্দি করা হয় ২৫১ জনকে। এর মধ্যে এখনো ৫০ জন গাজায় জিম্মি আছে। ধারণা করা হয়, এই ৫০ জনের মধ্যে জীবিত আছে ২০ জন। হামাসের হামলার জবাবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, হামলায় ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার বেশির ভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উপত্যকার একটা বড় অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজায় তীব্র খাদ্যসংকট চলছে। মিশরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে হামাসের কাছে।

এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য পথ তৈরি করা। প্রাথমিকভাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে ধাপে ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই প্রস্তাবে। খবর দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের। একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, এটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য একটি কাঠামোগত চুক্তি। কায়রোতে হামাসের আলোচকেরা এই নতুন প্রস্তাব পেয়েছেন। এই প্রস্তাবে কয়েকটি ধাপে কার্যক্রম পরিচালনার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যার আওতায় ইসরায়েলি হামলা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। এর পাশাপাশি দুই ধাপে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। প্রস্তাবটি পাওয়ার পর হামাস তাদের নিজস্ব নেতৃত্বের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরু করেছে। একই সঙ্গে, তারা অন্যান্য ফিলিস্তিনি দলগুলোর নেতাদের সঙ্গেও এটি নিয়ে পর্যালোচনা করবে। মিশর এই শান্তি প্রক্রিয়ার মূল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে।

গাজায় জিম্মি ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সংহতি জানিয়ে হাজারো ইসরায়েলি গত রোববার দেশজুড়ে ধর্মঘটসহ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। হামাসের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছে যুদ্ধের অবসান এবং অবশিষ্ট জিম্মি ব্যক্তিদের মুক্ত করতে বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা ও জিম্মি ব্যক্তিদের ছবি হাতে নিয়ে স্লোগান দেন। স্লোগানের পাশাপাশি বাঁশি, হর্ন ও ঢাকের শব্দে মুখর হয়ে ওঠে সারা দেশ। কেউ কেউ জেরুজালেম-তেল আবিব মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন। তেল আবিবে জিম্মি ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন ইসরায়েলি হলিউড অভিনেত্রী গাল গাদত।