স্বপ্ন মানুষের মনের গোপন জগতের দরজা। প্রতিদিন কোটি মানুষ ঘুমের ভেতর বিচিত্র সব স্বপ্ন দেখে। কিন্তু স্বপ্নে নিজের মৃত্যু দেখলে বিষয়টি অন্য মাত্রা নেয়। অনেকেই এ ধরনের স্বপ্ন দেখে ভয়ে আঁতকে ওঠেন, কেউবা আবার এটিকে জীবনের নতুন অধ্যায়ের পূর্বাভাস মনে করেন। প্রশ্ন হচ্ছে—আসলে স্বপ্নে মৃত্যু দেখা কী বোঝায়?
আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে, স্বপ্নে নিজের মৃত্যু দেখা মানে শিগগিরই পরিবারের কারো মৃত্যু হবে বা অমঙ্গল ঘটবে। অথচ ইসলাম এভাবে ব্যাখ্যা করে না। মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম স্বপ্নের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, স্বপ্ন যদি ভালো হয়, তবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ; আর যদি ভয়ংকর বা দুঃখজনক হয়, তবে তা শয়তানের প্ররোচনা মাত্র। তাহলে স্বপ্নে নিজের মৃত্যু দেখা মানেই কি অমঙ্গল? নাকি এর ভিন্ন কোনো অর্থ আছে? এ অবস্থায় একজন মুসলমানের করণীয় কী?
হাদিসে বলা হয়েছে, ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে আসে (বোখারি : ৬৫১৫, ৬৫৩৩)। দুঃস্বপ্ন বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে নবীজি (সা.) উম্মতদের আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। আবার কোনো কোনো হাদিসে খারাপ স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার পাশাপাশি বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলার কথাও এসেছে। (তিরমিজি : ৩৪৫৩)
আবু সালামা (রহ.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, আমি আবূ কাতাদা (রা.) কে বলতে শুনেছি, আমি এমন স্বপ্ন দেখতাম যা আমাকে রোগাক্রান্ত করে ফেলত। অবশেষে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ভালো স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ পছন্দনীয় কোনো স্বপ্ন দেখে তখন এমন ব্যক্তির কাছেই বলবে, যাকে সে পছন্দ করে। আর যখন অপছন্দনীয় কোনো স্বপ্ন দেখে, তখন যেন সে এর ক্ষতি ও শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়, তিনবার থু থু ফেলে এবং কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করবে না। (বোখারি : ৬৫৬৮)
এ বিষয়ে প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, স্বপ্নে নিজের মৃত্যু দেখলেই যে কেউ মারা যাবে বিষয়টি এমন নয়। হতে পারে স্বপ্নে কেউ নিজের মৃত্যু দেখল, অথচ বাস্তবে তার হায়াত (আয়ু) বাড়বে। এ কারণে যারা স্বপ্নের ব্যাখ্যা ভালো বুঝেন, এমন কারো কাছেই একমাত্র স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া উচিত।
তবে যে স্বপ্ন দেখার পর নিজের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে, এমন মনে হয় যে স্বপ্নে খারাপ কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছেন— এমন স্বপ্ন কাউকে বলা উচিত নয়। এমন হলে বেশি বেশি ইস্তিগফারের পাশাপাশি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে পানাহ চাওয়া উচিত। সেই সঙ্গে সম্ভব হলে তৎক্ষণাৎ বাম পাশে তিনবার থুথু ফেলার পাশাপাশি দুই রাকাত সালাত আদায় করা যেতে পারে বলেও মত আহমাদুল্লাহর।
তিনি দাবি করে বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শয়তান মানুষকে নাজেহাল করতে খারাপ স্বপ্ন দেখায়। অযথাই ভয়ংকর কিছু মানুষকে দেখিয়ে পেরেশানিতে রাখার জন্য। তবে কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে সেটি আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি বা স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানেন এমন কাউকে ছাড়া অন্যদের বলার ক্ষেত্রে নিষেধ রয়েছে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মৃত্যু-সম্পর্কিত স্বপ্ন জীবনে বড় পরিবর্তনের প্রতীক। এটি হতে পারে চাকরি হারানো, নতুন সম্পর্কে জড়ানো, পুরোনো সম্পর্ক ভাঙা কিংবা জীবনের দিক বদলের ইঙ্গিত।
ফ্রয়েড ও ইয়ুং-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এমন স্বপ্ন ভেতরের ভয়, অজানার উদ্বেগ এবং নতুন রূপান্তরের প্রস্তুতি বহন করে।