ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ভারত-চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, অংশীদার হিসেবে দেখার আহ্বান

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। ছবি- সংগৃহীত

ভারত ও চীনকে একে অপরের হুমকি বা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং অংশীদার হিসেবে দেখতে হবে বলে জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি। মঙ্গলবার তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এটি ২০২০ সালের পর দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। ২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্ক কার্যত ভেঙে পড়ে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

ওয়াং ই বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক এখন ‘সহযোগিতার দিকে’ রয়েছে। জয়শঙ্কর জানান, ভারত ও চীন সম্পর্কের ‘কঠিন সময়’ অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে চাইছে। আলোচনায় বাণিজ্য, তীর্থযাত্রা ও নদীর তথ্য ভাগাভাগিসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ইস্যু উঠে আসে।

ওয়াং ই ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও বৈঠক করবেন, যেখানে সীমান্ত বিরোধ সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে। এই সফরকে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সাম্প্রতিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কে বরফ গলছে

গত বছর অক্টোবর মাসে বিতর্কিত হিমালয় সীমান্তে টহল ব্যবস্থাপনা নিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে সমঝোতায় পৌঁছায় ভারত ও চীন। এরপর থেকে দুই দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—চীন এ বছর ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য তিব্বতের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে; ভারতও চীনা পর্যটকদের জন্য ভিসা সেবা পুনরায় চালু করেছে এবং নির্দিষ্ট সীমান্তপথ দিয়ে বাণিজ্য পুনরায় শুরু করতে আলোচনা শুরু করেছে।

খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছর দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলও পুনরায় শুরু হতে পারে। ওয়াং ই’র এই বৈঠকগুলো আসন্ন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন সফরের প্রস্তুতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাত বছর পর এটাই হবে মোদির প্রথম চীন সফর। যদিও শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

মার্কিন সম্পর্কের অবনতির প্রেক্ষাপটে ঘনিষ্ঠতা

ভারত-চীন সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রক্রিয়াটি এমন সময়ে ঘটছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন বাড়ছে। চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এতে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।

এ বিষয়ে সোমবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে লেখা এক প্রবন্ধে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো অভিযোগ করেন, ভারত রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ তৈরি করছে। তিনি লেখেন, ‘ভারত কার্যত রাশিয়ার তেলের বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে—নিষিদ্ধ অপরিশোধিত তেল কিনে তা রপ্তানি করছে এবং মস্কোকে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করছে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে চায়, তবে তাকে সে অনুযায়ী আচরণ করতে হবে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও তা উন্নত করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতাও সময়ের দাবি।’