ঢাকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

শর্তসাপেক্ষে অস্ত্র হস্তান্তরে রাজি হামাস

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে মিশরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল ও হামাস। এ অবস্থায় শর্তসাপেক্ষে অস্ত্র হস্তান্তর করতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এ ছাড়াও ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দি-জিম্মি বিনিময় প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস।

রোববার (৫ অক্টোবর) হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ও মাঠের পরিস্থিতি অনুযায়ী অবিলম্বে বন্দি বিনিময় শুরু করতে আমরা আগ্রহী।’ তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় এখন হামাসের আলোচনার মূল অগ্রাধিকার।

এ আলোচনা এমন সময়ে হচ্ছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও বন্দি বিনিময়ের একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করেছেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি ও সাম্প্রতিক অভিযানে আটক এক হাজার ৭০০-রও বেশি বন্দিকে মুক্তি দেবে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ অংশ নিচ্ছেন। মিশরের উপকূলীয় শহর শার্ম এল-শেখে সোমবার (৬ অক্টোবর) থেকে এ আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আশা প্রকাশ করেছেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব হতে পারে।’

হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় সংগঠনটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, ‘গাজা উপত্যকার সব এলাকায় সামরিক অভিযান, বিমান হামলা, গোয়েন্দা তৎপরতা ও ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে গাজা শহরের ভেতর থেকে সেনা প্রত্যাহারও জরুরি বলে তারা উল্লেখ করেছে।’

সূত্রটি আরও জানায়, ‘ইসরায়েল এই শর্তগুলো মেনে চললে হামাসও তাদের সামরিক অভিযান সমানভাবে স্থগিত করবে।’

সৌদি মালিকানাধী প্যান আরব সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল আরাবিয়াকে হামাসের সূত্র জানিয়েছে, ‘আমরা ইসরায়েলিদের মরদেহ সংগ্রহ শুরু করেছি এবং কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বোমা হামলা বন্ধের অনুরোধ করেছি। আমরা কাতারের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের জন্য আমেরিকান গ্যারান্টি পেয়েছি। আমরা আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি ফিলিস্তিনি-মিশরীয় সংস্থার কাছে অস্ত্র হস্তান্তর করতে সম্মত হয়েছি।’

ইসরায়েলি সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের প্রতিনিধি দল রোববার সন্ধ্যায় মিশরে পৌঁছাবে। কায়রো নিশ্চিত করেছে যে তারা ‘ইসরায়েলি বন্দি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ের প্রক্রিয়া এবং মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়ন’ নিয়ে হামাস প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মিশরগামী আলোচনার আগে ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বন্দি বিনিময় চলাকালীন যুদ্ধ চলতে পারে না’।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ২৫১ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করা হয়, যাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনো গাজায় বন্দি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এদের মধ্যে ২৫ জন মারা গেছেন।

রোববার রাতে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, আক্রমণ শুরুর আগে গাজায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ ছিল, এর মধ্যে এখন প্রায় ৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ‘গাজা শহরে অভিযান তীব্র হওয়ায় ও দখলের সিদ্ধান্তের কারণে হামাস এবং তাদের সমর্থক দেশগুলো এখন চাপে আছে।’