বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে হালকা ও মাঝারি মাত্রার বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তি দেশের ভেতরে বা আশপাশের এলাকায় ছিল।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশাল উপজেলা। এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে দেশের ইতিহাসে এমন কয়েকটি ভয়াবহ ভূমিকম্প রয়েছে, যেগুলোর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল বিশাল। নিচে সেসব গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ভূমিকম্প তুলে ধরা হলো—
১৭৬২ সাল, টেকনাফ
১৭৬২ সালে টেকনাফ থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত ফল্ট লাইনে ৮.৫ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপ প্রায় তিন মিটার ওপরে উঠে আসে—এর আগে এটি ছিল ডুবন্ত দ্বীপ। একই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের একটি দ্বীপ ছয় মিটার ওপরে উঠে যায়। সীতাকুন্ড পাহাড়ে নিচ থেকে কাদা–বালুর উদগীরণ ঘটে এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুনামির প্রভাবে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বহু ঘরবাড়ি ভেসে যায়। এতে প্রায় ৫০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
১৮৬৯, শিলচড়
‘কাচার আর্থকোয়াক’ নামে পরিচিত এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৫। এর উৎপত্তিস্থল ছিল জৈন্তা পাহাড়ের উত্তরাংশে অবস্থিত শিলচড়, যা সিলেটের খুব কাছেই। ভূমিকম্পটি প্রায় ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ বর্গমাইল এলাকায় অনুভূত হয়। সিলেটের পূর্বাঞ্চলসহ শিলচড়, নওগাং ও ইম্ফল এলাকায় বহু কংক্রিটের স্থাপনা ধ্বংস হয়। প্রাণহানি তুলনামূলক কম হলেও সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
১৮৮৫ সাল, মানিকগঞ্জ
১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই আঘাত হানা এই ভূমিকম্পটি ‘বাংলা আর্থকোয়াক’ নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭, এবং এর উৎপত্তিস্থল ছিল মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া। ভূমিকম্পে ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। এর কম্পন ভারতের সিকিম, বিহার, মনিপুর ও মিয়ানমার পর্যন্ত অনুভূত হয়। ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং পাবনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
১৮৯৭ সাল, শিলং
ইতিহাসে ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়াক’ নামে পরিচিত এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয়ের শিলং অঞ্চল। সরকারি হিসাবে মোট ১,৫৪৩ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে—এর মধ্যে সিলেটে ৫৪৫ জন এবং রাজশাহীতে ১৫ জন। উৎপত্তিস্থলের ৩০ হাজার বর্গমাইল এলাকার প্রায় সব কংক্রিট ও পাথরের ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। সিলেটের দুই-তৃতীয়াংশ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়, আর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঢাকাসহ পুরো বাংলায় বিস্তৃত ফাটল সৃষ্টি হয় এবং সুরমা ও ব্রহ্মপুত্র নদব্যবস্থায় গভীর প্রভাব পড়ে।
১৯১৮ সাল, শ্রীমঙ্গল
১৯১৮ সালে সংঘটিত এই ভূমিকম্পটি ‘শ্রীমঙ্গল আর্থকোয়াক’ নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৬, আর উৎপত্তিস্থল ছিল শ্রীমঙ্গলের বালিছড়া। শ্রীমঙ্গল ও ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়, তবে কোনো প্রাণহানির তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া ১৫৪৮ সালের ভূমিকম্প ছিল বাংলাদেশের অঞ্চলে নথিভুক্ত প্রথম বড় ভূমিকম্প। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন স্থানে মাটি ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় এবং দুর্গন্ধযুক্ত কাদা–পানি বের হয়। যদিও প্রাণহানির কোনো তথ্য লিপিবদ্ধ নেই। পরবর্তীতে ১৬৪২ সালের আরেক ভূমিকম্পে সিলেট অঞ্চলের বহু দালান–কোঠা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

