গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলি বিমান হামলার তীব্রতা আবারও বেড়েছে। গত বুধবার দিনভর চালানো অন্তত ছয়টি হামলায় ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে।
চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে চারটি পৃথক হামলার পর পাঁচ নারী ও পাঁচ শিশুসহ ১৭ জনের মৃতদেহ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গাজা সিটিতে দুটি বিমান হামলায় সাত শিশু ও তিন নারীসহ ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে এ হামলা সম্পর্কে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, খান ইউনিসে তাদের সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর জবাবেই এসব হামলা করা হয়েছে। তবে কোনো ইসরায়েলি সেনা হতাহত হয়নি।
হামাস ইসরায়েলের এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, ইসরায়েল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘মর্মান্তিক গণহত্যা’ চালাচ্ছে।
গাজার বাসিন্দারা জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমার মেয়ে বারবার জিজ্ঞেস করে- যুদ্ধ কি আবার শুরু হলো? আমরা আশা করলেই গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে যায়।’
উত্তর গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত মোহাম্মদ হামদৌনা বলেন, ‘মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কমেছে, কিন্তু প্রতিদিনই হামলা চলছে। শহর ধ্বংস, ক্রসিং বন্ধ, খাবার–ওষুধ-কিছুই যথেষ্ট নয়।’
দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতার এ হামলাকে ‘নৃশংস’ মন্তব্য করে বলেছে, পরিস্থিতি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে বিপজ্জনকভাবে দুর্বল করছে।
এরই মধ্যে গত সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এতে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন এবং ভবিষ্যতে একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।
তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়ে গেছে- হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্র করা হবে, কোন দেশ শান্তিরক্ষী পাঠাবে এবং ইসরায়েল মানবিক সহায়তার ওপর নিষেধাজ্ঞা না তুললে গাজায় পূর্ণ সহায়তা কীভাবে পৌঁছাবে, তা নিশ্চিত নয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন- গড়ে প্রতিদিন সাতজনেরও বেশি। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জন অপহৃত হয়। এর পরবর্তী দুই বছরের সংঘাতে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৬৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
গত বুধবার গাজায় নতুন সহিংসতার পাশাপাশি দক্ষিণ লেবাননেও ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে। এর আগের দিন আইন এল-হিলওয়ে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১৩ জন নিহত হয়- যা ইসরায়েল–হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতির পর সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটানো হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতিতেও ইসরায়েলের ‘বর্বর হামলা’ অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে হামাস। তারা বলছে, এ ধরনের হামলা পরিস্থিতিকে আবারও ভয়াবহ সংঘাতে ঠেলে দিতে পারে।
গাজার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে হতাহতের ঘটনা ঘটছে; জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ঘটনাও বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র।
সূত্র: গার্ডিয়ান নিউজ

