ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় আটক থাকা সব জিম্মিকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে এক ভিডিওবার্তায় তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের অংশ হিসেবে এ নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি চলছে।
নেতানিয়াহু হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত ওই বার্তায় বলেন, ‘ইসরায়েল খুব বড় জয়ের দ্বারপ্রান্তে।’ তিনি জানান, জিম্মি মুক্তির কারিগরি দিক চূড়ান্ত করতে ইসরায়েলের আলোচক দলকে কায়রো পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলোচনাটি কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, ঈশ্বরের কৃপায় আসন্ন সুক্কোত উৎসবের মধ্যেই ‘জীবিত ও নিহত সব জিম্মিকে’ ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হতে পারে। সপ্তাহব্যাপী ইহুদি উৎসব সুক্কোত শুরু হবে সোমবার সন্ধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ে হামাসকে নিরস্ত্র ও গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তার ভাষায়, ‘এটি হবে হয় কূটনৈতিকভাবে ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুসারে, না হয় সামরিকভাবে, আমাদের উদ্যোগে।’
ট্রাম্পের চাপ ও প্রশংসা
শনিবারই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিক সামাজিক মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রশংসা করেন। তিনি লেখেন, ‘জিম্মি মুক্তি ও শান্তি চুক্তির সুযোগ দিতে ইসরায়েল সাময়িকভাবে বোমা হামলা বন্ধ করেছে, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’ একই সঙ্গে ট্রাম্প হামাসকে সতর্ক করে বলেন, ‘হামাসকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে সব বাজি শেষ।’ তিনি বিলম্ব মেনে না নেওয়ার ইঙ্গিতও দেন।
ট্রাম্প আরও জানান, হামাস নিশ্চিত করলেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, জিম্মি বিনিময় শুরু হবে এবং পরবর্তী পর্যায়ে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতি নেবে। তার ভাষায়, এটি ‘এই তিন হাজার বছরের বিপর্যয়ের সমাপ্তির পথে এক পদক্ষেপ।’
নেতানিয়াহুর ভিডিওবার্তার পর ট্রাম্প আরও একটি পোস্টে জানান, ইসরায়েল গাজা থেকে প্রাথমিক প্রত্যাহারের লাইনে সম্মত হয়েছে এবং সেটি হামাসকে দেখানো হয়েছে। ট্রাম্পের উপস্থাপিত মানচিত্র অনুযায়ী, ওই রেখাটি গত মাসে গাজা সিটিতে শুরু হওয়া বড় আক্রমণের আগে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ সীমার প্রতিফলন।
সে সময় গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকাই আইডিএফের দখলে ছিল। এর মানে, ইসরায়েল দক্ষিণের রাফা অঞ্চল ও মিশর–গাজা সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোরে উপস্থিতি বজায় রাখবে।
‘আমি হাল ছাড়িনি’
নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের জিম্মি মুক্তির ইচ্ছা অব্যাহত সামরিক ও কূটনৈতিক চাপের ফলেই এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন, এখন পর্যন্ত ২০৭ জন জিম্মি ফিরিয়ে আনা হয়েছে, তবে বাকি জিম্মিদের বিষয়ে তিনি ‘কখনও হাল ছাড়েননি।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রথম পর্যায়ে সব জিম্মি মুক্ত হবে এবং আইডিএফ এমন অবস্থানে পুনরায় মোতায়েন হবে, যেখান থেকে তারা গাজাকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। তার দাবি, ইসরায়েল গাজা ছাড়াই সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
কায়রো যাচ্ছে আলোচক দল
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ নিউজ জানিয়েছে, রন ডার্মারের নেতৃত্বে ইসরায়েলের আলোচক দল রোববার বা সোমবার কায়রো যাবে। দলে আরও রয়েছেন জিম্মি–বিষয়ক কর্মকর্তা গ্যাল হির্শ, নেতানিয়াহুর পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ওফির ফালক এবং মোসাদ ও শিন বেটের সিনিয়র কর্মকর্তারা।
নেতানিয়াহু জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্টের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও কায়রো যাচ্ছেন, আলোচনাটি চূড়ান্ত করতে। তিনি বলেন, ‘তারা খেলা খেলতে আসছেন না। প্রথমে জিম্মিদের মুক্তি, তারপর অন্য ধাপ।’
চ্যানেল ১২–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়ায় একমত হওয়া হবে। প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত হলে জীবিতদের মুক্তির জন্য ৭২ ঘণ্টার কাউন্টডাউন শুরু হবে। নিহতদের দেহ ফেরাতে আরও সময় লাগতে পারে।
হামাসের মধ্যে মতবিরোধ
আল-জাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আলোচনার আগে সোমবার সিনাইয়ের শার্ম আল–শেখে হামাসের প্রতিনিধি দল পৌঁছাবে। কাতার থেকেও প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেবে।
তবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক শাখার মধ্যে এখনো মতভেদ রয়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতারা প্রস্তাবটি গ্রহণে রাজি হলেও সামরিক কমান্ডারদের অনেকেই নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধের ধাক্কা সামলানো তরুণ যোদ্ধারা সহজে অস্ত্র সমর্পণে রাজি নাও হতে পারেন।
শনিবার সন্ধ্যায় মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কায়রোতে সোমবার ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হবে। বৈঠকে জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।