ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

কেন বই হয়ে উঠছে ডেটের সেরা উপহার?

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৯:৪৬ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

সম্প্রতি লন্ডন-ভিত্তিক পত্রিকা দ্য টাইমস-এ সাংবাদিক সেসি ব্রাউনিং বইপ্রেমীদের জন্য আয়োজিত এক বিশেষ ডেটিং অনুষ্ঠানে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। এই অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছেন ‘বুকিশ টিন্ডার’।

তিনি উল্লেখ করেন, আজকাল বইয়ের প্রতি আগ্রহী হওয়া অন্যতম জনপ্রিয় একটি শখ হয়ে উঠেছে। যেমন, পপ তারকা ডুয়া লিপা সম্প্রতি বই নিয়ে একটি মাসিক পডকাস্ট শুরু করেছেন এবং বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডিওর ক্লাসিক বইয়ের প্রচ্ছদে ডিজাইন করা ব্যাগ বাজারে এনেছে।

যেহেতু জেন-জি প্রজন্ম এখন ইন্টারনেট-ভিত্তিক জীবনসঙ্গী খোঁজার গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে, বইপ্রেমীদের জন্য জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে বইয়ের দোকানের চেয়ে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে? যেখানে বইয়ের সারির সামনেই হয়তো পছন্দের মানুষটির সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যেতে পারে। ‘নটিং হিল’ সিনেমার জুলিয়া রবার্টস এবং হিউ গ্রান্টের ক্ষেত্রে যদি এমনটা হতে পারে, তবে আপনার সঙ্গে কেন নয়?

যুক্তরাজ্যের এই রিড-ডেটিং ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের পছন্দের একটি বই হাতে রাখেন। সম্ভাব্য সঙ্গীর কাছে নিজের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতেই সচেতনভাবে এই বইটি বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু কোন বই দিয়ে কেমন মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়?

মাল্টার অত্যন্ত বইপড়ুয়া ও বই কলামিস্ট রবার্ট পিসানি বলেন, “আমি আলি স্মিথের ‘হাউ টু বি বোথ’ বইটি সঙ্গে রাখব। আমার মনে হয়, এর মাধ্যমে আমি বোঝাতে চাই যে আমি কিছুটা জটিল প্রকৃতির মানুষ এবং গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। আমার মধ্যে সূক্ষ্ম রসবোধও রয়েছে। বড় ছবির মধ্যে ছোট ছোট খুঁটিনাটি বিষয়গুলো কীভাবে মিলে যায়, তা দেখতেও আমি ভালোবাসি।”

ভূমধ্যসাগরীয় সাহিত্য উৎসবের সহ-সমন্বয়কারী লিয়ান এল্লুল হেসে বলেন, “আমি হান কাং-এর ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ বইটি বেছে নেব, কারণ আমি নিরামিষাশী। তবে শুধু শিরোনামের জন্য নয়, এই উপন্যাসে ইয়ং-হাই নামের এক চরিত্রের নীরবে সব মেনে না নেওয়ার এক মর্মস্পর্শী গল্প বলা হয়েছে।

এর তীব্রতা এবং অস্পষ্টতা আমার মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। আমি সাধারণত অদ্ভুত, অস্থির এবং ভিন্ন ধরনের গল্পের প্রতি আকৃষ্ট হই, যা সমসাময়িক সমাজের টানাপোড়েনের ওপর ভিত্তি করে লেখা। এটি মনকে আরাম দেওয়ার মতো কোনো হালকা বই নয়, বরং এটি উসকানিমূলক এবং চিন্তার খোরাক জোগায়।”

টাইমস২-এর প্রধান সম্পাদক এস্থার ল্যাফার্টি বলেন, ‘আমার মাথায় প্রথম যে বইটির নাম আসে, সেটি হলো আর. এফ. কুয়াং-এর লেখা ‘বাবেল’। যদিও এটি একটি উপন্যাস, এর শিরোনাম থেকেই বোঝা যায় যে আমি শব্দ ও ভাষা নিয়ে আগ্রহী। বইটি সমসাময়িক, যা আমার পছন্দের সঙ্গে মেলে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর প্রেক্ষাপট অক্সফোর্ড, যেখানে আমি বহু বছর পড়াশোনা করেছি, থেকেছি এবং কাজ করেছি। এই বইটিতে কেবল দারুণ একটি গল্পই নেই, বরং সাংস্কৃতিক স্বত্বাধিকারের রাজনীতি, এর সঠিক-ভুল নিয়ে ভাবনার মতো একটি বিষয়ও রয়েছে, যা জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য দারুণ।”

লন্ডনে ফিরে আসা যাক সেসি ব্রাউনিংয়ের অভিজ্ঞতায়। তিনি ভাবছিলেন, ‘এই ধরনের অনুষ্ঠানে আসার জন্য সবচেয়ে বাজে বই কোনটি হতে পারে? মাইন কাম্ফ?’ কিন্তু তার সম্ভাব্য সঙ্গী এতে হাসলেন না, আর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বুঝে গেলেন যে তারা দুজন এক পথে হাঁটছেন না।