ঢাকাই চলচ্চিত্রের নব্বইয়ের দশকে পর্দা কাঁপানো এক জুটি ছিলেন সালমান শাহ ও শাবনূর। মাত্র চার বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ে তারা একসঙ্গে ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গড়েছিলেন এক অনন্য অধ্যায়। সময় বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে- তবু সালমান–শাবনূরের জুটির আবেদন আজও তাজা, দর্শকের হৃদয়ে অমলিন।
বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন শাবনূর। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সালমান শাহকে নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। উল্লেখ্য, সালমান শাহের মৃত্যুর ২৯ বছর পর তার হত্যা মামলা নিয়ে আবারও তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে শাবনূর বলেন, ‘সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তাদের উদ্দেশে শুধু বলব, এসবের কোনো কথাই সত্য নয়। সালমানের কোনো বোন ছিল না, তাই আমাকে ছোট বোনের মতোই দেখতেন। আমাকে ‘পিচ্চি’ বলে ডাকতেন। তার মা–বাবাও আমাকে খুব আদর করতেন, মেয়ের মতোই ভালোবাসতেন।’
নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমিও সালমানকে ভাইয়ের মতোই দেখতাম। তবে আমাদের মধ্যে ছিল দারুণ বন্ধুত্ব। সালমান নাচে একটু দুর্বল ছিল। প্রায়ই বলতেন, ‘আমাকে একটু নাচ দেখিয়ে দে তো।’ আমি হাসতে হাসতে দেখিয়ে দিতাম।’
অন্যদিকে, এক সাক্ষাৎকারে সালমান শাহর সহকারী মুনসুর আলী শাবনূর প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি সাড়ে চার বছর সালমান ভাইয়ের সঙ্গে ছিলাম। তাদের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে কিছু জানি না। বরং ভাই সব নায়িকাকেই সম্মান করতেন। শাবনূরকে প্রথম দেখেই বলেছিলেন, ‘আমার তো কোনো বোন নেই, তুমি আমার ছোট বোনের মতো।’
সালমানের সঙ্গে শাবনূরের প্রথম দেখা হয়েছিল এফডিসিতে, মৌসুমীর সঙ্গে সালমানের শুটিং চলাকালে। পরবর্তীতে ‘তুমি আমার’ ছবিতে প্রথমবার একসঙ্গে কাজের সুযোগ পান তারা। সেই ছবির বিপুল সাফল্যের পর শুরু হয় নতুন এক যুগলতার গল্প।
শাবনূর বলেন, ‘আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল অসাধারণ। একই দৃশ্যে আমরা একে অন্যের চোখের ইশারা বুঝে ফেলতাম।’
তবে কাজের শুরু থেকেই তাদের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। সে প্রসঙ্গে শাবনূর বলেন, ‘সালমানকে আমি ভাই ছাড়া অন্য কোনো চোখে দেখিনি। কিছু মানুষ আমাদের সম্পর্ক নিয়ে মুখরোচক গল্প বানিয়েছে, কেউ সেটা দিয়ে ব্যবসাও করেছে। এতে আমি কষ্ট পেয়েছি, কারণ আমি আমার ক্যারিয়ারটা গড়েছি কঠোর পরিশ্রমে।’
সালমানের স্ত্রী সামিরা হক সম্পর্কেও শাবনূর বলেন, ‘সামিরা আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। শুটিংয়ে প্রায় সব সময়ই থাকত। সে নিজে আমার হাতে চুড়ি পরিয়ে দিয়েছে, পোশাক মিলিয়ে দিয়েছে, কানের দুল বেছে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে কখনো কোনো মনোমালিন্য হয়নি।’
সালমানের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার মুহূর্তকে জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা বলে উল্লেখ করে শাবনূর আরও বলেন, ‘হঠাৎ কেউ জানাল, সালমান মারা গেছে। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। ভেবেছিলাম কেউ মজা করছে। পরে নিশ্চিত হয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। এরপর এফডিসিতে গিয়ে ওকে শেষবার দেখি।’
অতীতের স্মৃতি টেনে এই নায়িকা বলেন, ‘সালমান যদি বেঁচে থাকত, বাংলা চলচ্চিত্রের চেহারাটা আজ ভিন্ন হতো। যেমন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের জুটি এখনো কিংবদন্তি- আমরা হয়তো তেমনভাবেই জায়গা করে নিতে পারতাম।’
শাবনূর বলেন, ‘যদি কোনো দিন সালমানের সঙ্গে দেখা হতো, আমি তাকে জিজ্ঞেস করতাম- সালমান, তুমি কেন মরে গেলে? তোমার কী কষ্ট ছিল? এত সাফল্য, এত ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও কেন তুমি চলে গেলে?’
সালমান–শাবনূর অভিনীত ১৪টি ছবির মধ্যে রয়েছে- ‘তুমি আমার’, ‘বিক্ষোভ’, ‘সুজন সখি’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘জীবন সংসার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’।

