ঢাকা শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
যুদ্ধবিরতি। ছবি- সংগৃহীত

চীনের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনার পর মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) দেশটির সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির অংশ হিসেবে টিএনএলএ মান্দালয় অঞ্চলের রুবি খনির কেন্দ্র মোগোক এবং শান রাজ্যের মংমিট শহর থেকে নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে।

গতকাল (৩০ অক্টোবর) টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে টিএনএলএ জানায়, ২৭ ও ২৮ অক্টোবর চীনের কুনমিং শহরে অনুষ্ঠিত আলোচনায় এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। চীন এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে।

দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে ‘বেইজিংয়ের তীব্র কূটনৈতিক চাপ’ এবং প্রায় প্রতিদিনের বিমান হামলার মুখে পড়ে টিএনএলএ অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, মোগোক ও মংমিট শহর সামরিক বাহিনীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে জান্তা সরকার উত্তর শান রাজ্যে টিএনএলএ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বিমান হামলা বন্ধ রাখবে।

চুক্তিটি এমন এক সময়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে, যখন মিয়ানমারের সামরিক সরকার বছরের শেষে দুই ধাপে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে—প্রথম ধাপ ২৮ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপ ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি জান্তার জন্য একটি বড় রাজনৈতিক সাফল্য, কারণ এতে শান রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাধাহীনভাবে ভোট আয়োজনের সুযোগ তৈরি হবে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ১০২৭’-এর মাধ্যমে টিএনএলএ ও তাদের মিত্র মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) উত্তর শান রাজ্যের বড় অংশ সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে দখল করে নেয়। এই অভিযান চীন-মিয়ানমার সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথগুলোতেও প্রভাব ফেলে।

গত বছরের আগস্টে এমএনডিএএ লাশিও শহর—উত্তর শান রাজ্যের কার্যত রাজধানী এবং জান্তার উত্তর-পূর্ব আঞ্চলিক কমান্ডের সদর দপ্তর—দখল করতে সক্ষম হয়। পরে টিএনএলএ মান্দালয় অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হয়, যা জান্তার জন্য একটি গুরুতর সামরিক ও রাজনৈতিক হুমকি সৃষ্টি করে।

জান্তার পতন ও সীমান্ত অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে চীন টিএনএলএ ও এমএনডিএএ-এর ওপর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বাড়ায়। চীন ইউনান প্রদেশ থেকে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেয়, পাশাপাশি জ্বালানি, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সরবরাহও স্থগিত করে।

চীনের প্রভাবে আরেকটি শক্তিশালী গোষ্ঠী ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি-ও টিএনএলএ ও এমএনডিএএ-কে সমর্থন কমিয়ে দেয়।

চীনের চাপের মুখে দীর্ঘ সময় টিকে থাকলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে টিএনএলএ তীব্র সামরিক হামলার মুখে পড়ে। জুলাই মাসে সেনাবাহিনী নওনঘকিও শহর পুনর্দখল করে, পরে কিয়াউকমে ও সিপাও শহরও তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। এই তিনটি শহর মান্দালয় থেকে চীনা সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত মহাসড়কের ওপর অবস্থিত, যা প্রায় দুই বছর পর পুনরায় জান্তার দখলে এসেছে।

সাম্প্রতিক এই যুদ্ধবিরতি কার্যত ‘অপারেশন ১০২৭’-এর সময় টিএনএলএ-এর অধিকাংশ অর্জনকে নিস্ক্রিয় করেছে এবং শান রাজ্যে জান্তার অবস্থানকে পুনরায় শক্তিশালী করেছে।

তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই যুদ্ধবিরতি মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে মূলত সংঘাতকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল হিসেবে কাজ করবে।