আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ গুছিয়ে আনছে বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোরের ছয়টি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের ডেকেছেন এবং সেখানে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে তিনি যশোরের আসনের ৬ জন নেতাকে ফোন করে এমপিপ্রার্থী হয়ে মাঠে কাজ করতে বলেন। তবে যশোরের সব সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের নিয়ে একসঙ্গে ‘ধানের শীষ’কে বিজয়ী করার নির্দেশনা দেন। সবাই তার নির্দেশনা মানবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
তারেক রহমান এর আগে বিভিন্ন জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের ফোন ও খুদে বার্তার মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সূত্র জানিয়েছে, যশোরের ৫টি আসনেই বিএনপির বিগত দিনের রাজপথের নেতাদের ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেওয়া হবে। এ ছাড়া শুধু যশোর-৬ আসন থেকে তরুণ প্রজন্মের নেতা, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেওয়া হবে। শ্রাবণকেই দল আপাতত বেছে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
তবে বিএনপির গুলশান অফিসের একটি দলীয় সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছে, এটি তারেক রহমানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও দলীয় সিদ্ধান্ত শতভাগের প্রায় নিরানব্বই ভাগ সঠিক আছে। এ নিয়ে অন্য এমপি পদপ্রার্থীরা মন খারাপ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে তারেক রহমান সবাইকে মন খারাপ না করার আহ্বান জানিয়েছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
যশোর জেলার ছয়টি আসনে তারেক রহমানের ‘গুড বুকে’ কারা রয়েছেন এবং কে হচ্ছেন ‘ধানের শীষ’-এর কাণ্ডারি, নিচে তাদের নাম উল্লেখ করা হলো:
যশোর-১ (শার্শা): এখানে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি মফিকুল হাসান তৃপ্তি। তিনি এই আসনে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে আগেও নির্বাচন করেছেন। এবারও তারেক রহমান তাকেই প্রতীক দিচ্ছেন।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা): সূত্র মতে, এই আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ‘ধানের শীষ’-এ লড়বেন সাবিরা নাজমুল মুন্নি। মুন্নি মনোনয়ন আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন। জানা গেছে, এই সংসদীয় আসনে ২২টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভা রয়েছে।
যশোর-৩ (সদর): এই আসনটি বিএনপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলা সদরের আসনে দীর্ঘদিন হেভিওয়েট প্রার্থীরাই লড়েছেন। সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের রওশন আলী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালেদুর রহমান টিটো, আলী রেজা রাজুর মতো জ্যেষ্ঠ নেতারা ছিলেন এ আসনের কাণ্ডারি। তারা কেউই আর বেঁচে নেই। এখন নতুন প্রজন্মের নেতারাই হাল ধরেছেন।
সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আগামী নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’-এর প্রতীক পাচ্ছেন এবং তার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির এই প্রার্থীর দলীয় অবস্থান সুদৃঢ়। তৃণমূলের সঙ্গেও রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। নেতাকর্মীদের কাছে তিনিই এই আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী।
যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন): এই আসনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক পাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও কৃষক দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব। তিনি যশোর-৪ আসনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। বিএনপির জন্য তিনি ঘরবাড়ি, অর্থসম্পদ সবকিছু হারিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে দলের সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন। টিএস আইয়ুবের তৃণমূলের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এবং দলের প্রতি অবদানের কারণে এলাকার মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন।
যশোর-৫ (মণিরামপুর): এই আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে লড়বেন দলের উপজেলা কমিটির সভাপতি শহীদ ইকবাল হোসেন। ইকবাল ছিলেন মণিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান এবং মণিরামপুর পৌরসভার দুইবারের চেয়ারম্যান। দল থেকেই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
যশোর-৬ (কেশবপুর): এখানে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী তরুণ প্রজন্মের নেতা, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। শ্রাবণ যশোরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। তাকেই দল বেছে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।




