অদৃশ্য জাদুর কাঠির ইশারায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে ঢাকাই সিনেমার বিতর্কিত চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। গোপনে দেশ ছাড়তে গেলে সিলেট বিমানবন্দরে আটক হন, তবে বিশেষ মহলের তদবিরে ওই যাত্রায় ছাড়া পান। এরপর কিছুদিন গ্রেপ্তার এড়াতে সাময়িক আত্মগোপনে থাকলেও, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্রকাশ্যে ফিরে আসেন।
হত্যা মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও নিপুণ আক্তার প্রকাশ্যে ঘুরছেন। নিয়মিত তার যাতায়াত রয়েছে বনানী ১১ নম্বর রোডে অবস্থিত স্পা সেন্টারেও।
সর্বশেষ শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) চলচ্চিত্র অভিনেতা নানা শাহর ছেলের বিয়েতে হাজির হন নিপুণ। ওই অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে একাধিক অতিথি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও চিত্রনায়িকা পলির শর্ট ভিডিওতেও দেখা গেছে নিপুণকে। ভিডিওতে দেখা যায়, নিপুণ চিত্রনায়িকা রোজিনা ও পলির সঙ্গে কোলাকুলি করছেন।
এক অভিজ্ঞ অভিনয়শিল্পী দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বহুল বিতর্কিত এই স্বৈরাচার দোসরকে বিয়েবাড়িতে দেখে অবাক হয়েছি। ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এফডিসি ও বিটিভিতে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। কিভাবে এখনো প্রকাশ্যে ঘুরছেন? দ্রুত শেখ হাসিনার এই দোসরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। না হলে জুলাইয়ের শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।’
জানা গেছে, আসন্ন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি নিপুণের পার্লারে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এক চিত্রনায়ক গোপন মিটিং করেছেন। সেখানে এই নায়ক-নায়িকা ছাড়াও গত দুই মেয়াদে মামলা সমর্থন করে শিল্পী সমিতি বিতর্কিত করা এক প্রযোজক-পরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন এক বাস কোম্পানির মালিক। মিটিংয়ে একটি সম্ভাব্য প্যানেল চূড়ান্ত করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজধানীর ভাটার থানাধীন এলাকায় হওয়া এক হত্যাচেষ্টা মামলায় নিপুণ আক্তার ১৭ অভিনয়শিল্পীর মধ্যে অন্যতম।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি রাজপথ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের কোনো সংস্থা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
গত দেড় দশকে স্বৈরাচারের দোসর ও শেখ সেলিমের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিএফডি-তে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। অবৈধভাবে শিল্পী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। তারপরও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরছেন।
নিপুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। রাজউকে তদবির বাণিজ্য, শেখ সেলিমের সহযোগিতায় বিভিন্ন পুলিশ নিয়োগ ও বদলি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পিকনিক ও ইফতারের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠান ভাগাভাগি, এফডিসির বহুতল ভবন থেকে কমিশন, চলচ্চিত্র দিবস পালনের নামে বড় অঙ্কের টাকা লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে।
এ ছাড়া মুনাফার ১০ শতাংশ প্রদানের শর্তে হিন্দি সিনেমা আমদানির পক্ষে পুরো ইন্ডাস্ট্রির বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন নিপুণ।
তার বিরুদ্ধে প্রাক্তন স্বামীরও পাহাড়সম অভিযোগ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর প্রকাশ্যে এসেছে। নিপুণ তাকে সবসময় শেখ সেলিমের ভয় দেখাতেন বলে গণমাধ্যমে অভিযোগ জানানো হয়েছে।




