বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে আবারও নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দীর্ঘ ২৯ বছর পর তার অপমৃত্যু মামলা এখন রূপ নিয়েছে হত্যা মামলায়। এ রূপান্তরের পর আলোচনায় এসেছে মামলার ১১ নম্বর আসামি রেজভি আহমেদ ফরহাদের দেওয়া ১৯৯৭ সালের একটি জবানবন্দি, যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে স্বীকার করেন যে, সালমান শাহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং সেই হত্যার নেপথ্যে ছিল তার শাশুড়ি লতিফা হক লুসি।
রেজভীর দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, সালমান শাহর মৃত্যু ছিল ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ড। ওই চুক্তি করেছিলেন লতিফা হক লুসি, যিনি সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হকের মা। রেজভী বলেন, আমরা সালমান শাহকে হত্যা করেছি, পরে সেটাকে আত্মহত্যা বলে সাজানো হয়। এই হত্যাকাণ্ডে সামিরা, তার মা লুসি এবং আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন।
রেজভীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে গুলিস্তানের একটি বারে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন খলনায়ক ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ, ছাত্তার, সাজু ও রেজভী নিজে। বৈঠকে ফারুক একটি ব্যাগ থেকে ২ লাখ টাকা বের করে জানান, সামিরার মা এই টাকা দিয়েছেন এবং সালমানকে শেষ করার জন্য মোট ১২ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফারুক বলেন, কাজের আগে ৬ লাখ এবং কাজের পরে বাকি ৬ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
সেই বৈঠকের পর তারা হত্যার প্রস্তুতি নেয়। সঙ্গে নেওয়া হয় প্লাস্টিকের দড়ি, সিরিঞ্জ, রিভলভার ও ক্লোরোফর্ম। রেজভীর বর্ণনা অনুযায়ী, ওই রাতেই তারা যায় সালমান শাহর বাসায়। তখন ঘরে ছিলেন সালমানের স্ত্রী সামিরা, তার মা লুসি এবং আত্মীয়া রুবি। রাত আড়াইটার দিকে সালমানকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে বেহুশ করা হয়। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসলে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সালমানের শরীরে ইনজেকশন পুশ করার নির্দেশ দেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। ইনজেকশন দেওয়ার পর সালমান নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তার মৃতদেহটি সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখা হয়, যেন আত্মহত্যা মনে হয়।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে ঢালিউডের সুপারস্টার সালমান শাহকে তার বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখনই মৃত্যুটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একাধিক তদন্তে বিষয়টি অপমৃত্যু বলে উল্লেখ করা হলেও, বছরের পর বছর ধরে ভক্তরা দাবি করে আসছিলেন, এটি আত্মহত্যা নয়, বরং হত্যা।
দীর্ঘ তদন্ত ও নতুন প্রমাণ পর্যালোচনার পর অবশেষে মামলাটি অপমৃত্যু থেকে রূপ নেয় হত্যা মামলায়। এ মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রধান আসামি সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। বাকি আসামিরা হলেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, শাশুড়ি লতিফা হক লুসি, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, রুবি (মেফিয়া বিউটি সেন্টারের মালিক), আবদুস সাত্তার, সাজু এবং রেজভি আহমেদ ফরহাদ।


