ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

৪০ বছর ধরে বিদ্যুৎহীন সীতাকুণ্ডের বশতনগরের ২০ পরিবার

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ১২:৫৭ পিএম
বিদ্যুৎহীন এলাকায় বাতি জ্বালিয়ে পড়ছে একটি শিশু। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের বশতনগর ১ নম্বর হাজারী সড়ক এলাকায় ৩০-৩৫টি পরিবার বসবাস করলেও এর মধ্যে প্রায় ২০-২২টি পরিবার এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

যেখানে দেশের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর দাবি করছে সরকার, সেখানে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও অন্ধকারেই দিন কাটে বশতনগরের এসব পরিবারের। দিনের আলো নিভলেই চারদিক ঘিরে ফেলে গা ছমছমে অন্ধকার। চোর-ডাকাত আতঙ্কে রাতে ভালো করে ঘুমাতেও পারেন না এখানকার মানুষজন।

তাদের ভাষায়, ‘বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বারবার সাবেক মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে গেছি। কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতি মিলেছে, কাজ হয়নি কিছুই। যাদের টাকা আছে, তারাই সংযোগ পাচ্ছে।’

এখনো এই এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই মোমবাতি, হ্যারিকেন বা কুপির টিমটিমে আলোই একমাত্র ভরসা। প্রচণ্ড গরমে ঘরে থাকা দায় হয়ে ওঠে। শিশুরা কান্নাকাটি করে, ঘরে থাকতে পারে না। শিক্ষার্থীরা হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করে, ফলে তারা অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে।

স্থানীয় কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের এখানে বিদ্যুৎ নেই বলে ফোন-ল্যাপটপ চার্জ দিতে পাশের গ্রামে যেতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও কেউ এখানে দোকানপাট খুলতে চায় না।’

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, ‘চাষাবাদ করে জীবন চলে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সেচসহ বিভিন্ন কৃষিকাজে সমস্যা হয়। তেল কিনে পাম্প চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহুবার গেছেন তারা। প্রতিবারই আশ্বাস মিলেছে- ‘দেখছি’, ‘হবে’- কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি কিছুই।

বসতনগরের মানুষগুলো আজও সেই আশাতেই বুক বেঁধে আছেন- কবে আসবে বিদ্যুতের আলো, কবে কাটবে এই দুর্ভোগের দিন।

গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত ৪০ বছরে বহুবার প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন তারা। ধরনা দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু আশ্বাস মিললেও মেলেনি ফল। ফলে অন্ধকারেই থেকে গেছে গ্রামটি। এতে অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত নিম্নআয়ের মানুষগুলো। বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চলে হ্যারিকেন, মোমবাতি, কুপির আলোয়। ফলে পড়ালেখায়ও পিছিয়ে পড়ছে এখানকার ছেলেমেয়েরা।

স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করব নাকি এসব প্রতিদিন কিনব তা বুঝে উঠতে পারছি না। বিদ্যুতের কারণে বিভিন্ন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।

স্থানীয় কলেজপড়ুয়া এক যুবক জানান, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় ভিন্ন গ্রামে ল্যাপটপ ও ফোন চার্জ দিতে যেতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে চাইলেও দোকানপাট করতে পারছেন না। এটির সমাধান খুবই জরুরি।জনপ্রতিনিধিদের ভুয়া আশ্বাস আর বিদ্যুৎ বিভাগের নীতিমালার বেড়াজালে আটকে আছে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। কখন তারা বিদ্যুৎ পাবে, কখন তাদের এ দুর্ভোগ শেষ হবে, এমনটাই আশায় আছেন সীতাকুণ্ডের বশতনগর, হাজারি গ্রামের ২০-২২টি পরিবার।’