ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া এলাকায় নসিমনের ধাক্কায় রাকেশ রায় (১৪) নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। সহপাঠীদের চোখের সামনে বন্ধুর লাশ পড়ে থাকতে দেখে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা সড়ক অবরোধ করে দোষীদের গ্রেপ্তার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে স্কুল ছুটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গড়েয়া-ঠাকুরগাঁও সড়ক অবরোধ করে রাকেশের সহপাঠীরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
জানা গেছ, নিহত রাকেশ এস.সি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে গোপালপুর দেউনিয়া বাজার এলাকার মৃত নিরঞ্জন রায় ও জুথী রাণীর মেজো ছেলে। দুর্ঘটনার পর তাকে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
অবরোধরত শিক্ষার্থীরা বলেন, রাকেশের মৃত্যু অবহেলার ফল। তারা দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের আশপাশে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন।
এ সময় তারা ছয় দফা দাবি জানান— দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার, পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, ধর্মীয় রীতিতে সৎকারে সহযোগিতা, অবহেলার দায়ে স্কুলের গেটম্যানকে বহিষ্কার ও পরিবার থেকে একজনকে চাকরি দেওয়া, স্কুলের সামনে স্পিডব্রেকার ও জেব্রা ক্রসিং স্থাপন, স্কুল প্রশাসনের ক্ষমা প্রার্থনা এবং নসিমনচালককে গ্রেপ্তার।
রাকেশের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারে। দুই বছর আগে তার বাবা মারা যান। বড় ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। পরিবারটির ভরসা ছিল রাকেশ—একদিন সংসারের অভাব ঘুচিয়ে দেবে, এমনই আশা ছিল সবার।
পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা বলেন, রাকেশ ছিল মেধাবী ও স্বপ্নবাজ। পড়াশোনা করেই পরিবারের কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিল। মা জুথী রাণী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সকালেই ছেলেকে স্কুলে পাঠাই, সন্ধ্যায় লাশ হয়ে ফিরল। আমি ন্যায়বিচার চাই।’
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি সরোয়ারে আলম খান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছে। জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। সড়কে দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।

