ভয়াবহ বন্যায় এখনো বিপর্যস্ত ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা। পাকিস্তানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৭। ভারতে বন্যা ও ভূমিধসে এক দিনে প্রাণহানি হয়েছে সাতজনের। গত রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়ায় বন্যায় এ পর্যন্ত ৩২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনো নিখোঁজ দেড় শতাধিক।
সবচেয়ে বিপর্যস্ত এই প্রদেশে তৈরি হয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব। বিদ্যুতের সংকট ও রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবে জনজীবন হয়ে উঠেছে বিপর্যস্ত। সংকট নিরসনে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অন্যদিকে, ভারতের কাশ্মীর অঞ্চলে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। এখন পর্যন্ত দেশটিতে বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে ৬০ জন। নিখোঁজ আরও ২০০। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তানে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা খাত। কয়েক দিনের বন্যায় খাইবার পাখতুনখোয়ার অন্তত ৬১টি সরকারি স্কুল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ৪১৪টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মোট ধ্বংসপ্রাপ্ত স্কুলের মধ্যে ৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং দুটি উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্কুলের আরও খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে স্কুল ভবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেঘভাঙা তীব্র বৃষ্টিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের গ্রামের পর গ্রাম। অনেক জায়গা থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। আর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গ্রামগুলোতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। দুই দিন আগেও এটি ছিল কর্মব্যস্ত একটি গ্রাম। এখন শুধুই ধ্বংসযজ্ঞ। শুক্রবারের আকস্মিক বন্যায় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে মুহূর্তেই ভেসে যায় শত শত মানুষ। পানির তীব্র স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘরবাড়ি, গাছপালা। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেন সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘সেদিন সকালে এত বেশি বৃষ্টি হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল কেয়ামত চলে এসেছে। এই গ্রামের সামনে পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। অনেক মানুষ গাড়ির ভেতরেই রয়ে যায়। অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ মারা গেছে। আমাদের গ্রামের এই পাশটা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে জাপান একটি সেতু তৈরি করেছিল। একটি বড় গাছ ব্রিজে আটকে গেলে পানি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়।’ দির লোয়ারে ভারি বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যার কারণে ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে গেছে, যা সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এরপর শাংলায় আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ধ্বংস হয়েছে। একইভাবে হরিপুরে সবচেয়ে বেশি ২৯টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুনের জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৭টি স্কুল। সরকারি তথ্যে আরও জানা গেছে, বুনের জেলায় বৃষ্টি ও বন্যার কারণে চারজন শিক্ষক এবং একজন স্টাফ নিহত হয়েছেন। আরও তিনজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। তথ্যে দেখা গেছে, দুর্যোগে চারজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।