থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘাতের অবসান ঘটল। আর তা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায়। মালয়েশিয়ায় আজ দুই দেশের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সই হয় ট্রাম্পের উপস্থিতিতে। চুক্তি শেষে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শান্তিচুক্তি করাতে খুবই ভালো, জাতিসংঘের চেয়ে অনেক ভালো।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যৌথ ‘শান্তিচুক্তি’ সই হয়েছে। রোববার মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এ চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটল। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের নেতাদের প্রশংসা করেন ট্রাম্প। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি শান্তিচুক্তি করাতে খুবই ভালো, জাতিসংঘের চেয়ে অনেক ভালো।’
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ‘সাহসী’ নেতাদের মধ্যে এই ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তি বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ধন্যবাদ জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আজ সকালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেন, ট্রাম্পের ‘সতর্ক নেতৃত্ব’ ও ‘অবিরাম প্রচেষ্টা’ ছাড়া এই চুক্তি সম্ভব হতো না। তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ট্রাম্পের প্রচেষ্টা এবং দেশটির প্রয়াত রাজমাতা সিরিকিতের মৃত্যুতে তার সমবেদনা জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, অস্ত্র প্রত্যাহার ও যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি শিগগিরই শুরু হবে।
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘাত গত জুলাইয়ে ভয়াবহ আকার নেয়। দুই দেশের সীমান্তে টানা পাঁচ দিনের সংঘর্ষে অন্তত ৪৮ জন নিহত হন। এ ছাড়া প্রায় তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। ওই সংঘাতের পর ট্রাম্প মধ্যস্থতা করে দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তির উদ্যোগ নেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাশে শতভাগ আছি এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে থাকব।’ রোববার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ১৩তম আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ট্রাম্প। সম্মেলনের আয়োজক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার নেতৃত্ব এ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ভূমিকার প্রতিফলন।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের দুই তীরের দেশগুলোর জন্য অসাধারণ সমৃদ্ধি গড়ে তুলব এবং নতুন সুযোগের দ্বার খুলব।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থন ব্যক্ত করেন। আনোয়ার বলেন, ‘আপনার উদ্যোগ বিশ্বকে আশার এক ক্ষীণ আলো দেখিয়েছে যে, দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতেও কূটনীতি ও সদিচ্ছা বিজয়ী হতে পারে।’ আসিয়ান মূলত ১০টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিতÑ ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের তথ্যমতে, এই দেশগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা ৬৭ কোটি ৮০ লাখ এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। এ বছর আসিয়ান তার ১১তম সদস্য হিসেবে পূর্ব তিমুরকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দেশটি ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং এর জনসংখ্যা ১৪ লাখ। এবারের সম্মেলনে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ছাড়া জোটের সব দেশের নেতারা অংশ নেবেন। আসিয়ান সম্মেলনের পাশাপাশি প্রতিবছর ইস্ট এশিয়া সামিট বা পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। এতে আসিয়ান দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা যোগ দেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন