ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫

১২টি ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থার যৌথ প্রতিবেদন

ফিলিস্তিনিদের ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও বিধ্বংসী’ বছর ২০২৫

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২৫, ০৪:২৫ এএম

ফিলিস্তিনিদের জন্য চলতি বছর বা ২০২৫ সাল ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও বিধ্বংসী’ বছর। গাজা ও পশ্চিম তীরে হত্যাকা-, গণউচ্ছেদ ও অবরোধÑ সব ক্ষেত্রেই ইসরায়েলের নৃশংসতা দ্বিগুণ হয়েছে। ১২টি ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থার যৌথ প্রতিবেদনে এসব উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার, যা বেড়ে ২০২৫ সালের অক্টোবরে দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ১৭৩-এ। নিহতদের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিশু এবং প্রায় ১০ হাজার নারী। আরও ১০ মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। খবর টিআরটি ওয়ার্ল্ডের। চলতি বছর এখন পর্যন্ত গাজার ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেÑ যা মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ। অনেকে একাধিকবার স্থানচ্যুত হয়েছেন, কারণ পুরো পাড়া-মহল্লা, পানি-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো ধসে পড়েছে। অবরোধ ও খাদ্য সরবরাহ লাইন ভেঙে দেওয়ার কারণে অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত ৪৬১ জন, এর মধ্যে ১৫৭ শিশু ক্ষুধায় মারা গেছে। সহায়তার অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে বা হামলায় ২ হাজার ৩০৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৬ হাজার ৯২৯ আহত হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ১,২০০ দখলদার-সেটলার হামলা হলেও ২০২৫ সালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়।

৪৪টি পশুপালনকেন্দ্রিক ফিলিস্তিনি গ্রাম পুরোপুরি উচ্ছেদ হয়েছে; মোট বাস্তুচ্যুত ২ হাজার ৯৩২ জন, যার মধ্যে এক হাজার ৩২৬ শিশু। গোপন আটক বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিটেনশনের সংখ্যা ২০২৩ সালে ১,০০০ থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৫৭৭-এ পৌঁছেছে। অত্যাচার, চিকিৎসা না দেয়া ও অমানবিক পরিবেশে ৯৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মারা গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ‘২০২৫ এক অকল্পনীয় বাস্তবতা উন্মোচন করেছেÑ একটি রাষ্ট্র যেটি আন্তর্জাতিক আইনকে উপেক্ষা করে সীমাহীনভাবে সহিংসতা চালাচ্ছে।’

নামেই যুদ্ধবিরতি চলছে গাজায়। ইসরাইলের নির্বিচার হামলা বন্ধে গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। তবে সেটি শুধু কাগজে কলমেই। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এক মাসের কম সময়ের মধ্যে নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় দেড় হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ১০ অক্টোবর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০ দিনে গাজায় প্রায় ৬০০ বার হামলা চালিয়েছে দখলদারদের বাহিনী। এসময়ে মারা গেছেন ৩৫৭ ফিলিস্তিনি।

ধংস হয়েছে হাজারো বাসস্থান। গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের প্রতিবেদনের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, এই কয়েক সপ্তাহে ৫৯১ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল। এসব লঙ্ঘন হয়েছে বিমান, আর্টিলারি হামলা এবং সরাসরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে। মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এই সময়ে ইসরাইল ১৬৪ বার বেসামরিক মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, ২৫ বার ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রম করে আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়েছে, ২৮০ বার গাজায় বোমাবর্ষণ ও গোলাবর্ষণ করেছে এবং ১১৮টি ক্ষেত্রে মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস করেছে।

গত এক মাসে ৩৫ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে দখলদার বাহিনী। এ ছাড়া গাজাজুড়ে মানবিক সহায়তা ব্লক করা, ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস করা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল চলছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল ইসরাইল ও হামাস। এর একটি দফায় ‘বিমান ও গোলা হামলাসহ সব ধরনের সামরিক অভিযান স্থগিত করার’ কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা মানছে না ইসরাইল।

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজায় ফের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ও শিশুও রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। মার্কিন-মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি জারি থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল ট্যাঙ্ক ও ড্রোন থেকে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে এবং এতে বারবারই লঙ্ঘিত হচ্ছে যুদ্ধবিরতি, বাড়ছে হতাহত ও ধ্বংসযজ্ঞ। গাজার চিকিৎসা সূত্র জানায়, গাজা সিটির আল-তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে দুইজন নিহত হন, যার একজন শিশু। আহত ১৫ জনকে আল-আহলি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। এছাড়া পূর্ব গাজা সিটির জায়তুন এলাকায় ইসরায়েলি গুলিতে আরও এক ফিলিস্তিনি নিহত হন। পরে খান ইউনিসের কেন্দ্রীয় অংশে ইসরায়েলি হামলায় ফটোসাংবাদিক মাহমুদ ওয়াদি নিহত হন। চিকিৎসকরা জানান, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে যে এলাকা ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণাধীন হিসেবে চিহ্নিত নয় সেই জায়গায় ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন। ওয়াদির বাবা ইসসাম বলেন, ‘মাহমুদ নিরাপদ এলাকায় ছবি তুলছিল... কিন্তু ইসরায়েল কোনো অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পূরণ করে না।’ গাজা সিটির কেন্দ্রীয় অংশের আল-দারাজ স্কুলে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে নারীসহ আরও ১৭ জন আহত হন।