ঢাকা বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

খালেদা জিয়ার দোয়া মাহফিলের মঞ্চে জুলাই আন্দোলনের আসামি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ১০:১২ পিএম
বামে খালেদা জিয়ার দোয়া মাহফিলে ও ডানে আওয়ামী লীগের মঞ্চে। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিএনপির দোয়া মাহফিলের মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পলাতক সংসদ সদস্য নিলুফার আঞ্জুম পপির ঘনিষ্ঠভাজন এবং মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া মামলার আসামি মো. নেজামুল হক সরকার (৫০)। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছবিটি ভাইরাল হলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়।

এর আগে ১ ডিসেম্বর গৌরীপুর উপজেলার ৯ নম্বর ভাংনামারী ইউনিয়নের অনন্তগঞ্জ (বয়ড়া) বাজারে ময়মনসিংহ–৩ (গৌরীপুর) আসনের মনোনয়নপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসেনের সমর্থকদের আয়োজনে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। একই দিনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ‘বিনা’র একটি অনুষ্ঠানও ছিল, যেখানে কৃষিবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় আয়োজিত এ দোয়া মাহফিলে অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ-৩ আসনের পলাতক সংসদ সদস্য নিলুফার আঞ্জুম পপির ঘনিষ্ঠ এবং মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া মামলার ৩৮ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. নেজামুল হক সরকার। 

এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ মো. আজিজুল হক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাবিবুল ইসলাম খান শহীদসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ মো. আজিজুল হক বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে আমি উপস্থিত ছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে নেজামুল উপস্থিত ছিল। তবে এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

খালেদা জিয়ার দোয়া মাহফিলে জুলাই আন্দোলনের মামলার আসামি মো. নেজামুল হক সরকার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

এ ঘটনার মাধ্যমে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসেনের সমর্থকরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দলে পুনর্বাসন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সুজিত কুমার দাস।

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি আমি দেখেছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর এবং মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে এভাবে মঞ্চে বসিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন কোনোভাবেই কাম্য নয়। দলীয় নির্দেশ অমান্য করে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

অভিযোগ উঠেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মো. নেজামুল হক সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী একাধিক মামলার পলাতক আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম ও তার ভাই মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর ঘনিষ্ঠ এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। 

এ ছাড়া তার ভগ্নিপতি সৈয়দ রফিক গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী একাধিক মামলার পলাতক আসামি। বর্তমানে এসব পলাতক আসামিদের সঙ্গে নেজামুল হক সরকারের নিয়মিত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রয়েছে বলেও দাবি করেছে একাধিক সূত্র।

তবে একাধিকবার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেও নেজামুল হক সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

আওয়ামী লীগ নেত্রীর সঙ্গে মো. নেজামুল হক সরকার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গৌরীপুর থানার এসআই মো. আলমগীর কবীর বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী একটি মামলায় আমি তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছি। তবে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া অভিযোগটি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। বর্তমানে ওই অভিযোগের তদন্ত চলমান।’

এদিকে, একই দিনে মাহফিল খান নামে এক আওয়ামী সমর্থকের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসেনের ছবি সেঁটে তোরণ নির্মাণের ঘটনায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. আব্দুল করিম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের এমপি নিলুফার আঞ্জুম পপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম সাহেবের আস্থাভাজন গেট বানিয়ে ধানের শীষের নমিনি ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসেনকে সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। এতে ভাংনামারী ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

পোস্টে তিনি তোরণের ছবি এবং পলাতক এমপি নিলুফার আঞ্জুম পপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের সঙ্গে তোলা ছবি সংযুক্ত করেন।

আওয়ামী লীগের মঞ্চে সঙ্গে মো. নেজামুল হক সরকার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘প্রোগ্রামটি ছিল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিনা’র। সেখানে আমার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে যেতে পারিনি। আজ আপনিসহ দুই জন বিষয়টি জানতে ফোন করেছিলেন। এ ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ময়মনসিংহ জেলা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’