ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের হুঁশিয়ারি ব্যবসায়ীদের

বর্ধিত মাশুল স্থগিতের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০২:৩৩ এএম

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত মাশুল আদায় স্থগিত করার দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পোর্ট ইউজার্স ফোরাম। এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান না হলে বন্দর বন্ধের মতো বড় কর্মসূচির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তারা। গতকাল শনিবার দুপুরে নগরের টাইগারপাস মোড়ে নেভি কনভেনশন হলে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবায় অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপের প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে নবগঠিত সংগঠনটি।

প্রতিবাদ সমাবেশে বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের ২ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। তারা হাত তুলে বর্ধিত মাশুল স্থগিতের দাবি জানান।

ব্যবসায়ীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। ১৫ অক্টোবর থেকে এই নতুন মাশুল কার্যকর হয়। আগের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ হারে মাশুল বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে নতুন মাশুল কার্যকর করা হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে। সভায় আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্ধিত মাশুল স্থগিত করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত ট্যারিফ নির্ধারণ করতে হবে। এই দাবিতে আজ রোববার থেকে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করবেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান না হলে বড় কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সভায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক বলেন, ‘ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে যখন প্রশাসকেরা বসে ছিলেন, সেই সময় মাশুল বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এটা হতে দেওয়া যাবে না। আমরা বিদেশি অপারেটরের বিরুদ্ধে নই। দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আপনি বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিন। কিন্তু মাশুল বাড়িয়ে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া যাবে না। আগামী দিনে মাশুল বাড়ানোর জন্য বন্দর বন্ধ হলে আপনারা (নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে) দায়ী থাকবেন।’

সভায় এশিয়ান–ডাফ গ্রুপের মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, মোংলা ও পায়রা বন্দরে মাশুল বাড়ানো হয়নি। শুধু বাড়ানো হয়েছে চট্টগ্রামে। যেখানে চট্টগ্রাম বন্দর লাভে আছে। তাহলে কেন এই কারসাজি? সভার সঞ্চালক ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘যে সরকার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ট্যারিফ কমায়, সেই সরকার বন্দরে ট্যারিফ বাড়ায়। এতে দেশের ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এই ট্যারিফ অযৌক্তিক মনে করি। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

বিজিএমইএ পরিচালক এম ডি এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ট্যারিফ নিয়ে আমরা বিপদে আছি। এখন বন্দরের নতুন মাশুল ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, ‘নতুন ট্যারিফ কমানো না গেলে ব্যবসায়ীদের যাওয়ার জায়গা থাকবে না। সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১৩ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী এই খরচের বোঝা নিয়ে কাজ করতে অপারগ।’ বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘৫৭ টাকার ফি এক লাফে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করা হয়েছে। অথচ একবার যাত্রায় আমাদের ৫০০ টাকা আয় হয় না। সেখানে কীভাবে এক লাফে মাশুল চার গুণ বাড়ানো হয়?’

সভায় শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ আকতার, ইনল্যান্ড জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শফি, চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, বিপণিবিতান ব্যবসায়ী সমিতির শারুদ নিজাম, টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স ও ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের মঈনুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।