শীতের হিমেল হাওয়া যেমন ঠোঁট, হাত-পা কিংবা ত্বককে শুষ্ক করে তোলে, তেমনই ক্ষতি করে মাথার ত্বকেরও। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে মাথার ত্বক শুকিয়ে গিয়ে খুশকি বাড়তে থাকে। খুশকি হলে যে শুধু অস্বস্তিই হয় তা নয়; খুশকি মাথায় চুলকানি, চুল পড়া, এমনকি সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। তাই শীতকালে মাথার ত্বকের পরিচর্যা নিয়ে সচেতন থাকা জরুরি। বিশেষ করে যাদের মাথার ত্বক স্বভাবজাতভাবে শুষ্ক, তাদের খুশকির সমস্যা দ্রুত বেড়ে যায়। অন্যদিকে, যাদের ত্বক তেলতেলে, নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে তারা সহজেই খুশকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। শীতে খুশকি দূরে রাখতে কয়েকটি ঘরোয়া উপায় অবলম্বনে ভালো ফল পাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই কী কী উপায়ে খুশকি দূর করা যায়-
নারিকেল তেল
চুলের যে কোনো সমস্যা দূর করতে নারিকেল তেল বেশ কাজে দেয়। রাসায়নিক উপাদান মুক্ত নারিকেল তেল খুশকির সমস্যা কমাতে ও মাথার ত্বকের সংক্রমণ রোধে কার্যকর। তেল হালকা গরম করে ভালো মতো মাথার ত্বকে মালিশ করতে হবে। এতে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং চুলের কূপ উন্মুক্ত হবে। তাই সপ্তাহে অন্তত দুবার চুলের গোড়ায় সামান্য উষ্ণ নারিকেল তেল মালিশ করা উচিত। তেল মাথার ত্বকে প্রবেশ করবে ও চুলে পুষ্টি যোগাবে। তেল মালিশে অপুষ্ট চুল পুষ্টি পায় এবং পুষ্ট চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। মাথার ত্বকে মালিশ করা খুশকি দূর করতেও সহায়তা করে। আর খুশকি কমলে চুল পড়া অনেকটাই কমবে। এ ছাড়াও নারিকেল তেলের সঙ্গে দুই চা-চামচ লেবুর রস যোগ করে মাথার ত্বকে মালিশ করতে হবে। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে চুল ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুবারের বেশি লেবু ব্যবহার করা উচিত নয়।
টক দই
খুশকির সমস্যায় টক দই বেশ কার্যকর। টক দই মাথার ত্বকে ভালোভাবে মেখে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে। টক দইয়ের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ায় ব্যবহার করে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্যাক চুলের খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সহায়তা করে। সপ্তাহে দুবার এই প্যাক ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। এটি ত্বক ঠান্ডা রাখে, জ্বালা কমায়, এবং শুষ্কতা দূর করে। নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে খুশকি দ্রুত কমে এবং চুলও হয় মজবুত।
অ্যালোভেরা ও মেথি একসঙ্গে ব্যবহার করলেও খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। মেথির ভিটামিন ও প্রোটিন চুলের শুষ্কতা কমায় এবং ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার রাখে। সপ্তাহে একদিন অ্যালোভেরা বা আমলকীর রস মাথার ত্বকে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে মাথার ত্বক পুষ্ট হয়, খুশকি কমে, এবং চুল ঘন দেখায়।
আয়ুর্বেদিক উপাদান
খুশকি দমনে দীর্ঘদিন ধরে আয়ুর্বেদের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম, মেথি, ভৃঙ্গরাজ, জবা ফুল, অ্যালোভেরা ও আমলকী; এসব উপাদান মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে, সংক্রমণ কমায় এবং চুলকে শক্তিশালী করে। নিমের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করে। সপ্তাহে তিনদিন নিমের তেল ব্যবহার করলে খুশকি নিয়ন্ত্রণে থাকে। জবা ফুলের নির্যাস শুধু খুশকি কমায় না, চুলকে কালো ও মসৃণ রাখতেও সাহায্য করে। নারিকেল তেলের সঙ্গে নিমের তেল ও জবা ফুলের পাপড়ি গরম করে ব্যবহার করলে মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং খুশকি ধীরে ধীরে কমে যায়।

