ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের সঙ্গে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির চুক্তি হয়েছিল। গতকাল সোমবার জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব কথা বলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন মাহমুদুর রহমান। তিনি এ মামলার ৪৬তম সাক্ষী। দুপুরে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এদিন বেলা পৌনে ১১টায় ট্রাইব্যুনালে আসেন মাহমুদুর রহমান। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে মাহমুদুর রহমান প্রায় দুই ঘণ্টা সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারিবারিকভাবে সেনাবিদ্বেষী ছিলেন। তিনি ও তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই সেনাবিদ্বেষী ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে মাহমুদুর রহমান বলেন, পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নির্মমভাবে হত্যার পর শেখ হাসিনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন। এরপর বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পদক্ষেপ নেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে আলোচিত এ মামলায় আজ সাক্ষ্য দেবেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শেখ হাসিনার মামলায় আর দু’একজনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে: চিফ প্রসিকিউটর: ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চলা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আর দু’একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন মনে করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট সাক্ষ্য তারা উত্থাপন করেছেন।
গতকাল সোমবার মামলাটিতে ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্য নেওয়ার বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাক্ষী দিয়েছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আজ সাক্ষী দেবেন। তিনি আরও বলেন, আর দু’একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর আমরা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য শেষের আবেদন করব। এরপর এই মামলার যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হবে বলে আশা করি।
সাক্ষীর জবানবন্দির বিষয়ে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের উত্থান, সরকার টিকিয়ে রাখতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করা, বিডিআর হত্যাকা-, গণতন্ত্র মঞ্চের মাধ্যমে মব সৃষ্টি, কাদের মোল্লার রায় পরিবর্তন, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি কেলেঙ্কারির বিষয়গুলো সাক্ষী তুলে ধরেছেন।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে এ মামলা। এতে প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী সময়ে এই মামলার ৩৬তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।