ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাড়িভাড়া পাবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম
শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা। ছবি- এআই

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আর্থিক বিবরণী পাঠানো হয়েছে।

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে এ বিবরণী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন সূত্র সংবাদমাধ্যমকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছে।

ব্যয় বিবরণীতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া শতকরা হারে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মূল বেতনের শতকরা ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার) এবং শতকরা ১৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার), ১০ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার) ও ৫ শতাংশ (ন্যূনতম ২ হাজার) হারে বাড়িভাড়ার মাসিক ও বাৎসরিক আর্থিক সংশ্লেষের বিবরণী টেবিল আকারে উপস্থাপন করা হলো।

এ পরিস্থিতিতে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া শতকরা হারে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আর্থিক সংশ্লেষের বিবরণী পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যার্থে নির্দেশক্রমে পাঠানো হলো।

এর আগে গত ২৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শতকরা হারে বাড়িভাড়া ভাতা দিতে আর্থিক ব্যয় বিবরণী পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেই চিঠিতে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা শতকরা হারে প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য শতকরা ২০ শতাংশ ন্যূনতম ৩ হাজার টাকার নিচে নয় ও শতকরা ১৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ ন্যূনতম ২ হাজার টাকার নিচে নয় হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার মাসিক ও বাৎসরিক আর্থিক সংশ্লেষ বিবরণী স্ল‍্যাব বা টেবিল আকারে প্রস্তুতপূর্বক পাঠানোর জন্য বলা হলো।

উল্লেখ্য, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেলেও মে মাসে বাড়িয়ে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ করা হয়। এর বাইরে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী উৎসব ভাতা পান।

এদিকে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবসরের ছয় মাসের মধ্যে অবসরকালীন সব ধরনের সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজি জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেওয়া হয়। ১৩ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, শিক্ষকরা অবসর ভাতা পেতে বছরের পর বছর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে বাধ্য হন, যা এক ধরনের হয়রানি। একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খুব সীমিত বেতন পান—এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই তাদের অবসর ভাতা অবসরের ছয় মাসের মধ্যে প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হলো। আদালত আরও বলেন, শিক্ষকরা যেন আর অবসর ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়।

২০১৯ সালে দেশের এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী অবসরকালীন সুবিধা পেতে একটি রিট দায়ের করেন। রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া জানান, এর আগে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো এবং সেই টাকাই অবসরে ফেরত দেওয়া হতো। কিন্তু ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ সুবিধা থেকে যাওয়া ৬ শতাংশই বহাল রাখা হয়। এর বিরুদ্ধে শিক্ষকেরা রিট দায়ের করেন।

দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, শিক্ষকদের বেতন থেকে ১০ শতাংশ কাটা হলে তার বিপরীতে অতিরিক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এবং অবসরের ছয় মাসের মধ্যে অবশ্যই অবসরকালীন ভাতা ও সুবিধা দিতে হবে।

এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ অনুযায়ী মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটা হতো। অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫-এও একই নিয়ম ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল প্রজ্ঞাপনে তা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৬ শতাংশ করা হয়। অতিরিক্ত কাটা হলেও এর বিপরীতে কোনো আর্থিক সুবিধা বাড়ানো হয়নি। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল নতুন প্রজ্ঞাপনে শিক্ষকদের বেতন থেকে ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কাটার আদেশ দেওয়া হয়।