ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

কুকসু নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু, খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়ন

জাহিদুল ইসলাম, কুবি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

ডাকসু, রাকসু, জাকসু ও চাকসুর পর এবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করেছে খসড়া প্রণয়ন কমিটি।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) শিক্ষার্থীদের মতামত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে গঠনতন্ত্রের খসড়া সংস্করণ।

খসড়া অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সংসদে ২১টি এবং হল সংসদে ১১টি পদ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ১৯টি ও হল সংসদের ৯টি পদে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ।

অন্যদিকে, হল সংসদে প্রাধ্যক্ষ পদাধিকার বলে সভাপতি এবং আবাসিক শিক্ষক বা হাউস টিউটরদের মধ্য থেকে একজন কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বাকি নয়টি পদে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচন হবে।

গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে বর্তমানে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত থাকতে হবে। দ্বিতীয় বা তার অধিক স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ বছর, এবং প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ ছাড়া সান্ধ্যকালীন, নির্বাহী, বিশেষ মাস্টার্স, এমফিল, পিএইচডি, ডিপ্লোমা বা ভাষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা কুকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য, শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশের পর থেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ ও নির্বাচনি আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছেন।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী অর্পিতা দত্ত বলেন, ‘কুকসু যদি দায়িত্ববান ব্যক্তিদের নিয়ে হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সবার সামনে আসবে। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি বাদ দিয়ে যদি আমরা সঠিক ব্যক্তিকে বেছে নিতে পারি, তবে নিশ্চয়ই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ হবে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ ইরফানুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা এমন নেতৃত্ব চাই, যারা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরবে এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।’

আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী সায়েম মোহাইমিন বলেন, ‘অবশেষে কুকসুর খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশিত হয়েছে। কিছুটা দেরি হলেও এটি শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। আমরা চাই ছাত্র সংসদ নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হোক এবং দলীয়করণ ও অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকুক। শিক্ষার্থী-বন্ধব একটি কুকসু প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করছি।’

কুকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণের জন্য পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে ইউজিসিতে পাঠানো হবে। ইউজিসি যাচাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাবে। আইনগত বিষয়গুলোও পর্যালোচনা করা হবে। কোনো বিলম্ব ছাড়াই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, ‘খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়ন শেষ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণের পর বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দিয়ে তা ইউজিসি ও রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই কুকসুর বাকি কার্যক্রম শুরু করা হবে।’