অবশেষে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা আগামী ১ নভেম্বর থেকেই মূল বেতনের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২,০০০ টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক চিঠি জারি করেছে এবং চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসারের কার্যালয়ে পাঠিয়েছে।
চিঠিটি গত ২৮ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেন। এতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সরকার বিদ্যমান বাজেট পরিস্থিতি ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে প্রথম ধাপে বাড়িভাড়া ভাতা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কার্যকর করছে। আর ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে এই ভাতা আরও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, অর্থাৎ তখন মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২,০০০ টাকা) বাড়িভাড়া ভাতা প্রাপ্য হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বেশ কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাড়িভাড়া ভাতা প্রদানে বিদ্যমান নীতিমালা ও আর্থিক বিধি-বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নীতিমালাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১
- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)
- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি ডিপ্লোমা ও মৎস্য ডিপ্লোমা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)
এ ছাড়া সরকার সময় সময় যে প্রজ্ঞাপন, আদেশ, পরিপত্র বা নির্দেশনা জারি করবে, সেগুলোও মেনে চলতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই ভাতা বকেয়া হিসেবে প্রদান করা হবে না। পরবর্তী বেতন স্কেলে এই অতিরিক্ত সুবিধা সমন্বয় করতে হবে।
সব আর্থিক বিধি-বিধান মেনে ভাতা প্রদান করতে হবে এবং ভবিষ্যতে ব্যয় সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ সরাসরি দায়ী থাকবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।
বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ আসেনি। এর পেছনে রয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের টানা ১০ দিনের আন্দোলন।
শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন—বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, বাসাভাড়ার বৃদ্ধি এবং আর্থিক সংকটের কারণে এই দাবি ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক।
শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। পরে ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে, যেখানে মূল বেতনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় চূড়ান্তভাবে ১ নভেম্বর থেকে ভাতা কার্যকরের নির্দেশনা পাঠায়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তির বাতাস বইছে। দীর্ঘদিন ধরে যেই দাবি নিয়ে আন্দোলন চলছিল, অবশেষে তার বাস্তবায়ন শুরু হতে যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত সরকারের শিক্ষানুরাগী অবস্থান ও বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জানি, দেশের বেসরকারি শিক্ষকরা শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন। তাদের জীবনমান উন্নত না হলে শিক্ষার মানও টেকসই হবে না। তাই বাজেট সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ধাপে ভাতা ৭.৫ শতাংশ দেওয়া হলেও আগামী জুলাই থেকে এটি ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে। এটি শিক্ষকদের আর্থিক চাপ অনেকটাই কমাবে।’
বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণায় শিক্ষকসমাজে ব্যাপক আনন্দ ও স্বস্তি নেমে এসেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, এটি ন্যায্য প্রাপ্যের স্বীকৃতি।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতেও সরকার শিক্ষকদের কল্যাণে এমন উদ্যোগ নেবে।’





