জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার ও গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া একটি অডিও রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মিলে গেছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জানিয়েছেন একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ।
গতকাল সোমবার সিআইডি ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক রুকনুজ্জামান ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, পরীক্ষা করার জন্য তাদের কাছে ওই রেকর্ডিং জমা দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষায় নারীকণ্ঠ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এবং পুরুষকণ্ঠ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে মিলে গেছে। আদালতে বাজানো অডিওতে ‘হাসিনা ও তাপসের’ কথোপকথন শোনা যায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তিনি ৪৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যম ও কয়েকটি গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া ফোন রেকর্ড থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলন দমনে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ ও ‘যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি’ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নের মধ্যে শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তথ্য মতে, ওই আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত এবং ২০ হাজার আহত হন।
একটি বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা ও ফজলে নূর তাপসের মধ্যে হওয়া ফোনালাপ রেকর্ড করে। ওই কলটিতে শেখ হাসিনা তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে বলেন, ‘আমার নির্দেশ ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি সরাসরি নির্দেশ দিয়েছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটাই আমি বলেছি। আমি এত দিন তাদের থামিয়ে রেখেছিলাম, আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও শেখ হাসিনার আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আন্দোলন দমন করা হচ্ছে। ‘যেখানেই তারা কোনো সমাবেশ দেখবে, সেটা ওপর থেকেÑ এখন ওপর থেকে করা হচ্ছে, এটা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। এটা শুরু হয়েছে। কিছু
সরে গেছে।’ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ওই অডিও রেকর্ডটি শেখ হাসিনা ও ফজলে নূর তাপসের ফোনালাপ।