ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইসলামের আলোকে মুনাফিকদের চরম পরিণতি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:০৪ এএম

মুনাফিকরা হলো সেই সব লোক, যারা মুখে ইসলাম গ্রহণের দাবি করে; কিন্তু অন্তরে লুকিয়ে রাখে অবিশ্বাসের আগুন। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি, অথচ তারা প্রকৃতপক্ষে মুমিন নয়।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৮) মূলত মুনাফিকরা আল্লাহ ও ঈমানদারদের ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে। আসলে আল্লাহই তাদের ধোঁকায় ফেলে রাখেন এবং তাদের আসল রূপ প্রকাশ করে দেন, যাতে মুসলমানরা তাদের চিনতে পারে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়, অথচ তিনিই তাদের ধোঁকায় ফেলেন আর তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, অলসভাবে দাঁড়ায়, মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ১৪২)।

পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে মুনাফিকদের ভয়াবহ অবস্থা এবং তাদের কপট স্বভাব বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাদের বৈশিষ্ট্য হলো যখন মুসলমানরা বিজয় লাভ করে, তখন তারা বলে: আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম। আর যখন কাফিররা প্রাধান্য পায়, তখন তারা বলে: আমরা কি তোমাদের পক্ষে ছিলাম না এবং মুমিনদের হাত থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করিনি? (সুরা: নিসা, আয়াত: ১৪১)।

রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় এই মুনাফিকরাই মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তারা প্রকাশ্যে মুসলমান সেজে ভেতরে ভেতরে বিশ্বাসঘাতকতা করত। কখনো প্রতারণা করত, কখনো শত্রুদের সহায়তা করত, আবার সুযোগ পেলেই মুসলমানদের ক্ষতি করার চেষ্টা চালাত। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা বারবার রাসুল (সা.)-কে তাদের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।

রাসুল (সা.)-এর যুগে মুনাফিকদের সংখ্যা: রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় মদিনায় বসবাসরত মুসলমানদের মধ্যেই মুনাফিকরা অবস্থান করত।

ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৭০ জন পুরুষ ও মহিলা। তারা শহরের ভেতরে নানা রকম ফিতনা সৃষ্টি করত, মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ঘটানোর চেষ্টা চালাত, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করত এবং সুযোগ পেলেই বিশ্বনবী (সা.)-কে হেয় করার চেষ্টা করত। এই মুনাফিকদের মধ্যে কেউ ছিল আওস ও খাজরাজ গোত্রের, কেউ ছিল আহলে কিতাব, যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছিল, আবার কেউ ছিল মদিনার আশপাশে বসবাসকারী বেদুইনদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-এর কাছে মুনাফিকদের আসল পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছিলেন এবং কোরআনে তাদের বৈশিষ্ট্যও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মহানবী (সা.)-কে তাদের কিছু নামও জানানো হয়েছিল।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন

১. আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল: তিনি ছিলেন মদিনার মুনাফিকদের নেতা ও সবচেয়ে কুখ্যাত ব্যক্তি। তাঁর কারণে মুসলমানরা বারবার বিপদে পড়েছিল। আল্লাহ তাঁর সম্পর্কে একটি পূর্ণ সুরা মুনাফিকুন নাজিল করেছেন। এ ছাড়া সুরা হাশরের ১১-১৭ নম্বর আয়াত, সুরা নুরের ইফকের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত এবং আরও অনেক জায়গায় তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের কপটতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

২. নাবতাল ইবনে হারিস: তিনি ছিলেন এমন একজন মুনাফিক, যিনি রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, তিনি তো কানসর্বস্ব। বলুন, তিনি তোমাদের জন্য কল্যাণকর বিষয়াদি শোনেন। তিনি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন, মুমিনদের কথাও বিশ্বাস করেন এবং তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য রহমতস্বরূপ। আর যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা: তাওবা, আয়াত : ৬১)।

৩. হারিস ইবনে সুয়াইদ ইবনে সামিত: তাঁর সম্পর্কেই আল্লাহ বলেন: ‘আল্লাহ কীভাবে তাদেরকে হেদায়েত করবেন, যারা ঈমান আনার পর কাফির হয়ে গেছে? অথচ তারা সাক্ষ্য দিয়েছিল যে রাসুল সত্য এবং তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণও পৌঁছেছে। আল্লাহ জালিমদের কখনো হেদায়েত করেন না।’ (সুরা: আলে ইমরান, আয়াত: ৮৬)।

৪. জুলাস ইবনে সুয়াইদ ইবনে সামিত: আল্লাহ তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘তারা আল্লাহর নামে শপথ করে যে তারা তা বলেনি, অথচ তারা তো কুফরের কথা বলেছিল এবং ইসলাম গ্রহণের পর অবিশ্বাসে ফিরে গিয়েছিল।’ (সুরা: তাওবা, আয়াত: ৭৪)।

ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মুনাফিকরা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সব সময়ই ভয়াবহ হুমকি হয়ে এসেছে। কেননা তারা তাদের আসল চেহারা আড়াল করে মুখে প্রকাশ করে ঈমানের বীজ আর অন্তরে পোষণ করে অবিশ্বাষের বিষ। তারা প্রকাশ্যে মুসলমানদের শত্রুতা দেখায় না, বরং নিজেদের পাকা মুসলমান হিসেবে উপস্থাপন করে, মুসলমানদের মধ্যেই বসবাস করে; ফলে সাধারণ মানুষ তাদের ধরতে পারে না। তাদের এই ভেতরের শত্রুতা দূরের শত্রুর চেয়েও ভয়ংকর। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে তাদের শাস্তি কঠিন শাস্তির মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখ করেছেন: ‘নিশ্চয়ই, মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নি¤œস্তরে থাকবে, আপনি তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবেন না।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ১৪৫)।