তাওহীদ হৃদয়কে বলা হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের আগামীর সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। সেই সম্ভাবনার প্রস্ফুটিত হতেও শুরু করেছে বেশ ভালোভাবে। তবে নানা কারণে বেশ কিছুদিন ধরে হৃদয়ের ব্যাট কথা বলছিল না। খারাপ সময়ে বাঁধা পড়েন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মেলাতে পারছিলেন না বল ও রানের হিসাব। এশিয়া কাপেও হৃদয়ের ব্যাট নিষ্প্রভ দেখাচ্ছিল। প্রায় এক বছর ধরে তার ব্যাটে ছিল না কোনো ফিফটি। এমনকি তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার রব উঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সব মিলিয়ে ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলেন এই ক্রিকেটার। অবশেষে স্বরূপে ফিরলেন হৃদয়। সুপার ফোরে শ্রীলংকার বিপক্ষে সুপার ইনিংস খেলে এলেন আলোচনায়। সময়ের দাবি মিটিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং উপহার দিয়েছেন ২৪ বছর বয়সি এই তরুণ ব্যাটসম্যান। ৩০ বলে ফিফটি করেন। শেষ পর্যন্ত আউট হন ৩৭ বলে ৫৮ করে। তার এই ইনিংসটি বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়ের ইমারত গড়ে দেয়। তাই ভারত ম্যাচের আগে হৃদয়ের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা হচ্ছে দেশে-বিদেশে।
শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়ে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার মিসবাহ উল হক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রানিং বিটুইন দ্য উইকেট ভালো ছিল, বাউন্ডারি পেয়েছে ওরা। রানরেট কখনোই ওদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেনি। শেষ ওভারে ওরা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে, প্যানিক করেছে। হ্যাটস অব বাংলাদেশের ব্যাটারদের। এত বড় মঞ্চে যখন তারা এভাবে খেলে, এত কম্পোজ ক্রিকেট ওরা খেলে, এটা সম্ভবত দ্বিতীয়বার ওরা এত বড় রান তাড়া করে জিতল। সত্যিই অসাধারণ।’
পাকিস্তানের আরেক ক্রিকেটার শোয়েব মালিক হৃদয়ের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়ে বলেছেন, ‘যখন মাঠের একপাশ ছোট থাকে তখন সবাই ওদিকেই মারতে থাকে। হৃদয় সেটা করেনি। সে ফাঁকা জায়গায় মেরেছে। এক্সট্রা কাভার বা ব্যাকফুট পয়েন্টের দিকে যেসব খালি জায়গা ছিল সেখানেই সে মেরেছে। সে স্মার্টনেস দেখিয়েছে। রান তাড়ার সময় উইকেটে শান্ত থাকা আরও বড় গুণ। আগে ব্যাট করে উইকেটে শান্ত থাকা সহজ।’
হৃদয়ের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘তাওহীদ হৃদয় কতটা ভালো, সে ব্যাপারে অনেক শুনেছি এবং এবার তার ঝলক দেখেছি। কিন্তু সে তার ক্লাস দেখাল। শীর্ষ পর্যায়ের ইনিংস।’ অন্যদিকে, পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ বলেন, ‘ওপেনার সাইফের দুর্দান্ত ব্যাটিংই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছিল।
টি-টোয়েন্টিতে ৬০ রান একটি বড় স্কোর, আর ওপেনার যদি ৬০ রান করে তাহলে বোঝা যায় যে, রান তাড়া করার ক্ষেত্রে দলের ভিত্তি মজবুত ছিল। এরপর হৃদয়, যার মধ্যে প্রচুর প্রতিভা আছে, সেও হতাশ করেনি এবং দ্রুত ৫০ রান করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হৃদয় অনেক বড় প্রতিভাবান একজন খেলোয়াড় এবং আমি আশা করি ও এভাবেই তার প্রতিভা কাজে লাগাতে থাকবে এবং দুর্দান্ত ইনিংস খেলবে। কারণ তার মধ্যে সেই ক্ষমতা, দক্ষতা এবং কৌশল আছে যা দিয়ে সে এমন ইনিংস খেলতে পারে। তাই ম্যাচটি উপভোগ্য ছিল, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং চাপের ম্যাচ ছিল এবং বাংলাদেশ নিজেদের এবং তাদের ভক্তদের হতাশ করেনি।’ রমিজ রাজা মনে করেন, ম্যাচসেরার পুরস্কার না পেলেও অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন হৃদয়।
কঠিন সময়ে দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পর সমর্থকদের সঙ্গে নিজের প্রতিক্রিয়া শেয়ার করেছেন হৃদয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হৃদয় লিখেছেন, ‘চেষ্টা সবসময়ই থাকে, তবে ভাগ্য এবং রিজিক হয়তো সবসময় একরকম থাকে না। বাংলাদেশের জন্য খেলি, নিজের সর্বোচ্চ এবং সর্বশেষটুকু দিয়ে হলেও মাঠে লড়াই করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া সব খারাপ এবং ভালোর জন্য।’ সামনে ভারতের বিপক্ষে জ¦লে উঠবে হৃদয়ের ব্যাটÑ এ প্রত্যাশায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।