- জুয়া ও বেটিং সাইটে লগ্নি করে নিঃস্ব শত শত পরিবার
- ফেসবুক-ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে বেটিং অ্যাপের বিজ্ঞাপন
- থাকে লোভনীয় অফার ও বোনাসের প্রলোভন
- দেশে প্রায় ৫০ লাখ তরুণ-যুবক এসব জুয়ায় আসক্ত
- মোবাইল থেকে অ্যাপ ডিলিট করে দিলেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না পুলিশ
- সব হারিয়ে অনেক তরুণ বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ
প্রথমে অনলাইন জুয়াকে মজা হিসেবে নিলেও পরবর্তী সময়ে সেটা আর মজার মধ্যে থাকছে না। সেটা আসক্তিতে চলে যাচ্ছে। সেটা একেবারে সাধারণ জুয়ার থেকেও ভয়াবহ। সাধারণ জুয়া যেমন মানুষের দৈহিক জীবনে প্রভাব ফেলে ঠিক একই রকম করে তার চেয়ে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে অনলাইন জুয়াÑ ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
একটা সময় ছিল যখন তরুণ-যুবকরা বিকেল হলেই মাঠে ব্যস্ত থাকত বিভিন্ন খেলাধুলায়। সন্ধ্যা হতেই বাড়ি ফিরে বসত পড়ার টেবিলে। শুধুই মানসিক প্রশান্তি ও আনন্দের জন্য এসব খেলায় ছিল না আর্থিক প্রলোভন। বর্তমানে পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি। শহর বা গ্রামের মাঠে খেলাধুলা হয় না বললেই চলে। যদিও হয়, সেগুলোয় থাকে বাজি বা টাকার বিনিময়। বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির ব্যাপক বিকাশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশ-বিদেশের ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলা নিয়েও আগ্রহ তরুণ প্রজন্মের। এসব খেলা নিয়েও পাড়া-মহল্লায় হচ্ছে নিয়মিত জুয়ার আয়োজন। বলা যায়, মাঠের জুয়া এখন হয় টেলিভিশনের সামনে বসে। কোন বলে কত রান, এক ওভারে কত, এক ওভারে কয়টা ছক্কা বা চার, কোন দল জিতবেÑ এসব নিয়ে হচ্ছে বাজি।
মোবাইল সহজলভ্য হয়ে ওঠার এ সময়ে এখন ক্রিকেট বা ফুটবল দেখে জুয়ার প্রচলন কমলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে দেওয়া হয় হাজার হাজার জুয়ার অ্যাপের বিজ্ঞাপন। এসব বিজ্ঞাপনে বোনাসের নামে দেওয়া হয় লোভনীয় অফার। জুয়া খেলার এসব অ্যাপ মোবাইলে খুবই সহজলভ্য। যে কারণে বর্তমানে তরুণ-যুবকরা এসব জুয়ার অ্যাপে ব্যাপকহারে আসক্ত হয়ে পড়ছে। যে কারণে মাদকের মতো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে অনলাইনে জুয়া খেলা।
ফেসবুক-ইউটিউব ব্রাউজ করলেই অসংখ্য অ্যাপ দেখা যায়। যেখানে দেখানো হয় মুহূর্তেই লাখ লাখ টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন। এসব অ্যাপ নিজের মোবাইলে ইনস্টল করে এজেন্টের কাছ থেকে বিকাশ, নগদ ও রকেটে টাকা লোড করা যায়। এতে এজেন্টরা শতকরা ২০ টাকা রেখে দেয়। এসব অ্যাপে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকা লোড দেওয়া যায়। টাকা লোড দিয়ে তরুণ-যুবকরা যেখানে খুশি সেখানে বসেই জুয়া খেলতে পারে। এতে অভিভাবকরা বুঝতেই পারছেন না তার সন্তান কী করছে।
এভাবেই অনলাইনে বাজিতে বুঁদ হয়ে পড়ছে তরুণ প্রজন্ম। এসব সাইট ও অ্যাপে লগ্নি করে নিঃস্ব লাখ লাখ কিশোর যুবক। তাদের একটি বড় অংশই অর্থ উপার্জনের নেশায় জুয়ার আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছে। এতে তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-, পারিবারিক সহিংসতা। এমনকি হতাশা ও গ্লানি থেকে ঘটছে আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার গত কয়েক বছরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে। সিআইডি, ডিবি ও র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী শতাধিক ব্যক্তি। তবে প্রতিটি সাইট বন্ধ করার পরপর এ চক্র ভিপিএন (ভয়েস ওভার প্রটোকল নেটওয়ার্ক) দিয়ে সাইটগুলো আবার সচল করে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্র জানায়, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে (সিপিসি) অনলাইন জুয়ার সাতটি মামলা তদন্তধীন ছিল। এর মধ্যে তিনটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এখনো চারটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এ ছাড়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুসারে অনলাইন জুয়া ও বেটিংয়ের বিরুদ্ধে সারা দেশে জোরদার অভিযান শুরু করেছে সিআইডি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, অনলাইনভিত্তিক এ ধরনের অপরাধে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সিআইডি পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) এজেন্টকে অনলাইন জুয়ার লেনদেনে জড়িত থাকার প্রমাণসহ শনাক্ত করা হয়েছে। এসব এজেন্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ২০ অনুযায়ী অনলাইন জুয়া খেলা, জুয়া-সংক্রান্ত অ্যাপ বা পোর্টাল তৈরি ও প্রচারণা চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের জন্য ২ বছর পর্যন্ত কারাদ-, ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দ- প্রযোজ্য। এ ছাড়া ২১ ও ২২ ধারায় জুয়া-সংক্রান্ত লেনদেন, প্রতারণা বা জালিয়াতিকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ফেসবুক-ইউটিউবে হরহামেশা বিভিন্ন অ্যাপ ও সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচার হয়ে থাকে। যেখানে দেখা যায় লোভনীয় অফার বা বোনাস। যার মধ্যে রয়েছেÑ বিসিডট গেম অ্যাপ মোবাইলে ইনস্টল করলেই পাবেন ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ও ফ্রি ৪০০ স্পিন, ডেফাভেট ইনস্টল করলেই ২০ হাজার টাকা বোনাস, ২২ বেট ইনস্টল করলেই ৩৫ হাজার টাকা বোনাস, মেটাউইনে দেওয়া হয়েছ ২০টি স্পিন, যার মাধ্যমে জেতা সম্ভব লাখ টাকা। এ ছাড়া মেলবেট ইনস্টল দিলেই ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বোনাস, মোস্টবেট ইনস্টল দিলেই ২৫ হাজার টাকা বোনাস, জেকপট সিটি ইনস্টল দিলেই ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বোনাস, ভোলকান ভেগাস ইনস্টল দিলেই ১ হাজার ৫০০ ডলার বোনাস, স্পিন ক্যামিনো ইনস্টল করলেই ১ হাজার ডলার বোনাস।
এ ছাড়া অ্যাপে খেলা শুরুর বিষয়েও থাকে লোভনীয় অফার। যেমনÑ ওয়ানএক্স বেট ক্রিস্টাল গেম, কিং স্ট্রাইক গেম ইনস্টল দিলে ৫০০ টাকা বোনাস, জিলি সুপার উইন ইনস্টল করলেই ৫০১ টাকা বোনাস, কেকে এফবি স্টার ইনস্টলের পর খেলা শুরু করলেই লাখ লাখ আয়ের সুযোগ, ক্রেজি টাইন ইনস্টল দিয়ে টাকা লোড দিলেই ১২০ শতাংশ বোনাস (অর্থাৎ ১ হাজার টাকা লোড দিলে ১ হাজার ২০০ টাকা বোনাস), ৭৭এফবিÑ এতেও রয়েছে লাখ লাখ টাকা আয়ের সুযোগ, বিডি২২২- তেও রয়েছে লাখ লাখ টাকা আয়ের সুযোগ, কেকেএফবিডট কম ইনস্টল করলেই ২৮৮ টাকা বোনাস, ১১১১ বেট এতেও রয়েছে লাখ লাখ টাকা আয়ের সুযোগ, সিভি৩৩৩ডট কম এতেও রয়েছে লাখ লাখ টাকা আয়ের সুযোগ।
এসব লোভনীয় অফারের অ্যাপের মাধ্যমে টাকা আয়ের সত্যতা যাচাই করতে বেশ কিছু অ্যাপ ইনস্টল করা হয় প্রতিবেদকের মোবাইলে। তবে, ইনস্টল করে দেখা গেছেÑ এর পুরোটাই ভুয়া। তবে, এসব অ্যাপ ইনস্টল করে সর্বনি¤œ ২০০ টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত লোড করা যায়। এসব খেলা বা বেটে ১ পয়সা থেকে শুরু করে লাখ টাকা বাজি ধরা যায়।
কেউ যদি নিজে এসব জুয়ার এজেন্ট হয়, তাহলে তাকে কোনো বাড়তি টাকা দিতে হয় না। যদি কেউ এজেন্টের কাছ থেকে টাকা লোড দেয়, তাহলে তাহলে শতকরা ২০ টাকা এজেন্ট রেখে দেন। এ ব্যবসা করে এজেন্টরা কোটি কোটি টাকা আয় করছেন। তবে, যারা এ গেম খেলে তারা হয় নিঃস্ব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুয়ায় আসক্ত এক যুবক বলেন, একসময় টেলিভিশনে খেলা দেখার সময় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরেছি। এখন টেলিভিশনের সামনে বসে খেলা দেখে বাজি ধরতে হয় না। ফেসবুক-ইউটিউবে অসংখ্য জুয়ার অ্যাপের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এগুলোয় অনেক লোভনীয় অফার দেওয়া হয়। এগুলো সবই মিথ্যা আশ্বাস। এই জুয়া খেলে আমি এখন নিঃস্ব। একটা চাকরি ছিলÑ সেটাও ছেড়ে দিয়েছি, এ নেশায় পড়ে। তবে, আমি বলতে চাই ফেসবুক-ইউটিউবের এসব বিজ্ঞাপন সরকারের নিযন্ত্রণে নেওয়া দরকার। না হলে আমার মতো লাখ লাখ যুবক নিঃস্ব হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক যুবক বলেন, লেখাপড়া করে কোনো চাকরি পাইনি। যে কারণে ধীরে ধীরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছি। এ জুয়া খেলা মাদকের চেয়ে ভয়াবহ। এখন অনলাইনে বাজি খেলা আমার পেশার মতো হয়ে গেছে। অনলাইনে জুয়া খেলে কেউ টাকা জিততে পারে না। মাঝে মাঝে কিছু খেলা জেতা হয়। তাও আবার লোভে পড়ে হারাতেও হয়। আমার একটা চাকরি হলে বাজি খেলা ছেড়ে দেব।
জুয়ার প্রচারণায় কম্পিউটারের দোকানে বা ঘরে বসে কাজ করছে স্থানীয় এজেন্টরা। অবৈধ টাকা আয় করে এজেন্টরা কোটিপতি বনে গেলেও জুয়াড়িরা লাখ লাখ টাকা হেরে নিঃস্ব হচ্ছে। জুয়ার নেশায় ব্যবসায়ী ব্যবসার মূলধন দিয়ে, কৃষকের সন্তান জায়গাজমি, বসতবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে জুয়া খেলছে।
কেউ জুয়ার টাকা জোগাতে ধারদেনা, চুরিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে পরিবারে মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন যেন এসব দেখেও না দেখার ভান করে। জুয়ায় ঝুঁকে পড়েছেন ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকেরা। জুয়ার টাকা জোগাতে কেউ কেউ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এসব জুয়ার টাকা বেশির ভাগ লেনদেন হয়ে থাকে বিকাশ ও নগদে।
বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার বাজার কত টাকার, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে দেশের কত মানুষ অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত। তবে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
অনলাইন জুয়ার অর্থ ক্রেডিট কার্ড, ইলেকট্রনিক চেক, সার্টিফাইড চেক, মানি অর্ডার, ওয়্যার ট্রান্সফার অথবা ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আসতে পারে। সাধারণত, জুয়াড়িরা অনলাইন জুয়া কোম্পানিতে তহবিল আপলোড করে, বাজি ধরে বা তাদের অফার করা গেম খেলে, এবং তারপর যেকোনো জয়ের অর্থ নগদ করে। জুয়াড়িরা প্রায়ই ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে জুয়া অ্যাকাউন্টে তহবিল জমা করতে পারে এবং জয়ের অর্থ সরাসরি কার্ডে ফেরত পাঠাতে পারে; তবে, বেশির ভাগ মার্কিন ব্যাংক ইন্টারনেট জুয়ার উদ্দেশ্যে তাদের কার্ড ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এবং আমেরিকানদের ইন্টারনেট জুয়া সাইটগুলোয় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার প্রচেষ্টা সাধারণত প্রত্যাখ্যান করা হয়। বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক অর্থ পরিসেবা এমন অ্যাকাউন্ট অফার করে যার মাধ্যমে অনলাইন জুয়া তহবিল সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে, এসব পদ্ধতি এখন সহজ করে বিকাশ, নগদ, রকেটে টাকা লেনদেন করা হয়।
বাংলাদেশে জুয়া খেলা অবৈধ। অনলাইন জুয়া খেলা প্রায়শই পরিচালিত হয়। সম্পর্কিত আইনগুলোর মধ্যে রয়েছে: পাবলিক জুয়া আইন মানি লন্ডারিং, বৈদেশিক মুদ্রা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তবে, অনলাইন জুয়া-সম্পর্কিত ব্যাপক আইনের অভাব রয়েছে। কিছু অঞ্চলে অনলাইন ক্রীড়া বাজি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেবল টিভি বন্ধ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অনলাইন জুয়া খেলাটা ব্যাপক আকারে ধারণ করেছে। তবে, তথ্য প্রমাণের অভাবে আমরা তেমন কিছু করতে পারছি না। ধরেন, আমরা একজন এজেন্টের খোঁজ পেয়ে তাকে ধরতে গেলাম। সে যদি পুলিশের উপস্থিতি টের অ্যাপ ডিলিট করে দেয়, তাহলে তাকে আর আইনের আওতায় আনার সুযোগ থাকে না। যাদের হাতেনাতে ধরতে পারি তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যদি কেউ আমাদের তথ্য প্রমাণ দিয়ে সহায়তা করে, তাহলে অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন কাউসার বিপ্লব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এ যুগের অনেক কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একধরনের অনলাইন গ্যাম্বলিং বা অনলাইন জুয়া বা বেটিং এ ধরনের শব্দগুলো বেশ জন প্রিয়। গত এক দেড় বছর আগে অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ে আসক্ত ছিল প্রায় ৫০ লাখ তরুণ-তরুণী। এখন নিশ্চয়ই এর সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়ছে।
তিনি বলেন, প্রথমে অনলাইন জুয়াটাকে মজা হিসেবে নিলেও পরবর্তী সময়ে সেটা আর মজার মধ্যে থাকছে না। মজা থেকে পেরিয়ে সেটা আসক্তিতে চলে যাচ্ছে। আসক্তিটা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটা একেবারে সাধারণ জুয়ার থেকেও ভয়াবহ। সাধারণ জুয়া যেমন মানুষের দৈহিক জীবনে প্রভাব ফেলে ঠিক একই রকম করে তার চেয়ে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে অনলাইন জুয়া। যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ পর্যন্ত, এই বয়সি ছেলেমেয়েরা বেশি জড়িয়ে পড়ছে। আসক্তিতে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের সংখ্যাটা অনেক বেশি। তবে মেয়েদেরও একটি ভালো অংশ জড়িয়ে পড়ছে এ নেশায়।
অনলাইন জুয়ার আসক্তির ভয়াবহতা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নেশা জাতীয় বা বিভিন্ন ক্যামিকেল খেয়ে যেমন মানুষের মস্তিষ্কে স্ট্রাকচারাল চেঞ্জ হয়। অনলাইন গ্যাম্বলিংয়েও সেটা হচ্ছে। সুতরাং এটাকে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই। মজার পাশাপাশি টাকার লোভে একটি বড় অংশ জড়িয়ে পড়ছে এ জুয়ায়।
এদিকে রাতভর অনলাইনে গ্যাম্বলিং বা জুয়া খেলে বিভিন্ন শারীরিক ঝুঁকিতেও পড়ছে মানুষ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সালেহ উদ্দিন আহমেদ তুষার বলেন, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন রাতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের মাধ্যমেই আমাদের শরীরে সারা দিনে উৎপন্ন বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার হয়, প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা হয়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় সারকাডিয়ান রিদম। এটি শুধু রাতের ঘুমের সময়ে হয়ে থাকে। রাতে না ঘুমানোর ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের (কর্টিসল) মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে অতি অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস হতে পারে। রাতে ঘুমের অভাবে শরীরের বিপাকীয় ক্রিয়ায় যে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হয়, তা শরীর থেকে বের হতে পারে না। এতে শরীরের রক্তনালির ভেতরে প্রদাহের কারণে চর্বি জমে সরু হয়ে যায়, যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া ঘুমের অভাব অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যারিদমিয়া) এবং স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) রোগের জন্য দায়ী।