বর্তমানে ৫০০ শয্যার পাবনা মানসিক হাসপাতাল উন্নয়নে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার পুরো অর্থায়ন করবে সরকার। পাবনা মানসিক হাসপাতালকে ‘আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল’ নামে রূপান্তর করতেই এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তবে কিশোরগঞ্জসহ দেশের আট জেলার হাওর অঞ্চলে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত একটি প্রকল্প স্থগিত করেছে একনেক।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক বৈঠকে পাবনা মানসিক হাসপাতাল উন্নয়নসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকের পর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। এদিন ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩টি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত একনেক সভার পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি ‘অসুস্থ থাকায়’ এদিন সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। পরে তার দপ্তর থেকে প্রকল্প অনুমোদনের তথ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। এটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যার পুরো অর্থায়নই করবে সরকার।
১৯৫৭ সালে স্থাপিত মানসিক এই হাসপাতালে বর্তমানে ৫০০ শয্যা রয়েছে। কয়েক দফায় বাড়িয়ে সবশেষ ১৯৯৬ সালে এই সংখ্যায় উন্নীত করা হয়। মাদকাসক্ত নিরাময় ওয়ার্ডসহ ১৮টি ওয়ার্ডে পেয়িং শয্যা আছে ১৫০টি এবং নন-পেয়িং ৩৫০টি।
সোয়া ১১১ একরের এই হাসপাতালের ৩০ একর অংশ দেওয়া হয়েছে পাবনা মেডিকেল কলেজকে। চাহিদা অনুযায়ী সেখানে অবকাঠামোর সুবিধা নেই। সেবাসুবিধাও অপর্যাপ্ত বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে বহির্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, বৃত্তিমূলক ও বিনোদনমূলক চিকিৎসা বিভাগ চালু থাকলেও এক্স-রে, প্যাথলজি, ইসিজি, ইইজির বাইরে তেমন সুবিধাও নেই। পাঁচটির মতো একতলা, দোতলা ও তিনতলা ভবন থাকলেও বহুতল ভবন না থাকায় আবাসন সুবিধার ঘাটতি ও আন্তর্জাতিক মানের নানা সুবিধার অপর্যাপ্ততা রয়েছে।
নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে এর অনেকটাই নিরসনের পরিকল্পনা করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্প তাদেরই অধীনে বাস্তবায়ন করা হবে। একনেক সভায় এদিন এটিসহ আরও ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর দুটি নতুন এবং সাতটি পুরোনো প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো বা কমানো হয়েছে।
অনুমোদিত প্রকল্প হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়:
৫৩ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ের ‘পিআরও-অ্যাক্ট বাংলাদেশ: রেজিলিয়েন্স স্ট্রেন্থেনিং থ্রু এগ্রি-ফুড সিস্টেমস ট্রান্সফরমেশন ইন কক্সেস বাজার’ প্রকল্প। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়: ৭৬৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ‘গ্রামীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসই করার লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করা হয় (২য় পর্যায়; প্রস্তাবিত ৩য় সংশোধন)’। এর ফলে এই প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াল ৫ হাজার ১০৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (৩টি): ৮৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ‘খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (৩য় সংশোধন)’। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। ৪৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ‘জামালপুর শহরের নগর স্থাপত্যের পুনঃসংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প (৩য় সংশোধিত)’। এখন ব্যয় দাঁড়াল ১৮৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় কমিয়ে ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ (৩য় সংশোধিত)’। ব্যয় কমে দাঁড়াল ১ হাজার ৯৫৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়:
৪৭৯ কোটি ৩ লাখ টাকা কমিয়ে ‘উত্তরা লেক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। এখন ব্যয় দাঁড়াল ৯০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়: ১১৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প। ২৬১ কোটি ১০ লাখ টাকায় দাঁড়াল এই প্রকল্পের খরচ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়: ৭২৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ের ‘কিশোরগঞ্জ (বিন্নাটি)-পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর টোক জেলা মহাসড়ককে যথাযথ মানে উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। শিল্প মন্ত্রণালয়: ৮৫১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ের ‘বিএসটিআই’য়ের পদার্থ (ফিজিক্যাল) ও রসায়ন (কেমিক্যাল) পরীক্ষণ ল্যাবরেটরির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্প। বিদ্যুৎ বিভাগ: ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় কমিয়ে ‘ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প (২য় সংশোধিত)’। ব্যয় দাঁড়াল ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয় (২টি): ২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন (৪র্থ সংশোধিত)’ প্রকল্প। এখন ব্যয় দাঁড়াল ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল লেভেল ক্রসিং গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন (৫ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। এখন দাঁড়াল ১৭৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
কিশোরগঞ্জসহ দেশের আট জেলার হাওরাঞ্চলে বাস্তবায়নের জন্য স্থগিত হওয়া প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৩০৫ কোটি, ইফাদের ঋণ ৮৫১ কোটি, ডানিডার অনুদান ১০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হলে বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাধা দেন। তিনি বলেন, হাওরের পরিবেশ নষ্ট করে অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি অনুমোদন না দিয়ে স্থগিত করা হয়েছে। হাওরের অবকাঠামো নির্মাণ অংশ বাদ দিয়ে ডিপিপি সংশোধন করতে বলা হয়েছে।